
সোমবার (১৭ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পুলিশ বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, "অতীত নিয়ে কান্নাকাটি করার দরকার নাই। নতুনের জন্য আমরা প্রস্তুত এবং করে দেখাবো। এটা মুখে বলে আমরা নতুন বাংলাদেশ করবো, ইত্যাদি মুখে বলার দরকার নাই।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন,“তোমার কাছে যদি অনুশোচনা এসে থাকে, দুঃখ এসে থাকে, এই হলো সুযোগ। এই দুঃখটা গোল করার জন্য এমন কাজ করব, মানুষ ওটা শুধু ভুলে না, এই যেটা নতুন কাজ, সেটা দিয়ে স্মরণ করবে। অতীতের প্রশ্ন উঠবে না আর আমার কাছে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "এই নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বলতে যা তোমার মনে আসে, সে জিনিসটাকে প্রতিষ্ঠা করা এটাই হলো আমাদের মূল কাজ। এটা করতে পারলে আমরা আমাদের এই যে সুযোগ সৃষ্টি হলো, আমি যেটা সুযোগের উপরে জোর দিচ্ছি, অভ্যুত্থানের কারণে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণে আমরা নতুন বাংলাদেশের কথা জোর দিয়ে বলছি।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন,মাঝে মাঝে লোক মনে করে এটাও একটা রাজনৈতিক বক্তব্য। বলতে শুনতে ভালো লাগে কিন্তু অন্তঃসার শূন্য। আমরা সেভাবে বলার চিন্তা করি নাই। আমরা বাস্তবিক পক্ষে মনে করেছি যে এটা একটা মস্ত বড় সুযোগ। এটা যেমন নতুন দেশ, আর আশেপাশে দুই চারটা দেশের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া এটা না।
তিনি আরও বলেন,আমরা দুনিয়ার মাঠে খেলার খেলোয়াড়। আমরা ছোট মাঠে খেলার খেলোয়াড় না। বাংলাদেশ ওই যে বললাম বাংলাদেশের অপূর্ব একটা দেশ, সেই দেশে যারা আমরা দুনিয়ার মাঠে খেলি, আমাদের দিকে দেখে লোকে হাততালি দেক- বাংলাদেশ নেমেছে এবার। ওরকম জায়গা যেনো করতে পারি।
তিনি জানান,এটা কোন বাক্য উচ্চারণ করা, মানুষের মধ্যে একটু ভাবনা চিন্তা সৃষ্টি তা না। আমরা বাস্তবে পারি, আমাদের সে সুযোগ আছে, সেই সুযোগ কথা বারেবারে বলার চেষ্টা করছি, এই সুযোগ গুলো যেন আমরা গ্রহণ করি।"
তিনি আরো উল্লেখ করেন, "তো সেই নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী হিসেবে আমাদের করণীয়, কি কি করতে পারি? অতীত নিয়ে কান্নাকাটি করার দরকার নাই। নতুনের জন্য আমরা প্রস্তুত এবং করে দেখাবো। এটা মুখে বলে আমরা নতুন বাংলাদেশ করবো, ইত্যাদি মুখে বলার দরকার নাই, কাজে বলবো যে হ্যাঁ, এই হলো নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী এবং আশেপাশের যারা আছে তারা বলল যে, ভাই, আপনারা একটা কাজ দেখালেন এবার। এটা আমরা চিন্তা করি নাই, পুলিশের হাত দিয়ে এই কাজ হতে পারে!
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, “বাহিনী সামগ্রিকভাবে একটা কাঠামো, এই কাঠামোর কাছে অনেক শক্তি। যদি আমরা সে শক্তিকে ঠিক দিকে প্রসারিত করতে পারি, সেটি বলার জন্য যে কমিউনিকেট করার জন্য যে আমরা এই সুযোগটা গ্রহণ করি, আমরা কি কি করলে হবে, সে আলোচনাটা আমরা শুরু করি। এই জিনিসটা করা তো, সেটা বলবে যে, আমরা তো করতে চাই, কিভাবে করব?
আমরা সবাই মিলে একটা টিম, তোমরা একটা টিম আলাদা না, আমরা সবাই মিলে একটা, তোমাদেরও সেই সুযোগ করে দিতে হবে যাতে করে আমরা যতটুকু আমাদের স্বার্থে আছে, সেগুলো সেই আয়োজনগুলো করে দেওয়া।"
তিনি বলেন,"আমরা সবসময় চিন্তা করে আসছি যে বাংলাদেশে এত মানুষ, এর কপালে দুঃখ ছাড়া আর কিছু নাই, খালি বাড়ছে তো বাড়ছে, এতগুলো মানুষ। বাস্তব পরিস্থিতি তো উল্টো। আমরা এত সৌভাগ্যবান জাতি যে আমাদের শক্তির অন্ত নাই। মানুষের শক্তির সঙ্গে কেউ পাল্লা দিতে পারে না। মানুষের ভিতরে ভীষণ রকম একটা সৃজনশীলতা আছে। যে সমস্যা দেখে সে সমস্যাকে উল্টে, এটা সমাধান এমন জিনিস হয় যে মানুষ চিনতেও পারে না। এটা সমস্যা ছিল, এটা অদ্ভুত রকম করে পাল্টে, আমাদের সেই সামর্থ্য আছে।"
কারণ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "কারণ আমাদের যে জনসংখ্যা, তার বেশিরভাগ হলো একটা একেবারে কাঁচা তরুণ, এরকম দেশ দুনিয়াতে নাই। এত মানুষ, এত তরুণ মানুষের দেশ, এবং সে তরুণ অসহায় তরুণ না, তারা নানা বুদ্ধি করে, এটা করে, ওটা করে, কোন জিনিস বাদ থাকে না। আমরা অতীতে যা যা করে এসছি, একটু ফিরে দেখলে তার ব্যাখ্যা করলে দেখা যাবে যে কিরকম সমস্যাকে তারা সমাধান করে দিয়েছে। আমরা, আমরা সবাই মিলে তাদেরকে বাধা দিয়েছি। সরকার বাধা দিয়েছে, পুলিশ বাধা দিয়েছে, ব্যবসা বাধা দিয়েছে, কিন্তু তারা এর মধ্য থেকে কাজটা করে ফেলেছে।"
সূত্র:https://tinyurl.com/bdxu2n5y
আফরোজা