
এমআরটি পুলিশ মেট্রোরেল কর্মীদের মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে
এমআরটি পুলিশ মেট্রোরেল কর্মীদের মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে এ অভিযোগে ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার দেড়ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মীরা। পরে কর্তৃপক্ষের আশ^াসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে তারা।
সোমবার সকাল ১০টার পরে মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিত হয়। এদিকে ডিএমটিসিএলের কর্মীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনায় পুলিশের এক এসআইসহ দুইজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, গত রবিবার বিকেল সোয়া ৫টায় সচিবালয় স্টেশনে দুই নারী কোনো প্রকার পরিচয়পত্র প্রদর্শন না করেই সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ছাড়া সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান।
সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান। পরে ঠিক একইভাবে দুইজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান। এ বিষয়ের তাদের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএর সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করেন এবং কর্মরত আরেকজন টিএমওর শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করেন। উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীগণ বিষয়টি অনুধাবন করে ওই এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।
ওই পরিস্থিতি মেট্রোরেল কর্মপরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বর্তমানে আহত (রাইফেল দিয়ে কাঁধে আঘাত করা হয়) সিআরএকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং টিএমও (যাকে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে হেনস্তা করা হয়, গুলি করার জন্য বুকে রাইফেল ধরা হয়) ওই ঘটনার বিবৃতি দেওয়ার পর বাসায় যাওয়ার পথে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৭টা থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় ডিএমটিসিএলের কর্মীরা। এ সময় মিরপুর-১০ নম্বরসহ বিভিন্ন মেট্রোরেল স্টেশনে সিঁড়ি এবং চলন্ত সিঁড়ির কলাপসিবল গেট বন্ধ করে এতে একটি বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, সাময়িকভাবে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের অসুবিধার জন্য দুঃখিত।
ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মচারীদের ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা তথ্য তুলে ধরে ৬টি দাবি জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এমআরটি পুলিশ সদস্যের হাতে চারজন কর্মী লাঞ্ছিত হয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ডিএমটিসিএল কর্মীরা ৬টি দাবি তুলে ধরেছেন- ১. ঘটনার হোতা পুলিশ সদস্য এস আই মাসুদসহ সকল পুলিশ সদস্যকে শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ২. মেট্রোরেল ও এর কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে হবে। ৩. এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ৪. স্টেশন কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. স্টেশনে অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি যাতে পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। ৬. আহত কর্মীদের চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। পরবর্তিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে আবারও টিকিট ব্যবস্থা চালু করে মেট্রোরেলের কর্মীরা। সোমবার সকাল ১০টার দিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন তারা।
এমআরটি দুই পুলিশ বরখাস্ত ॥ এদিকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চার কর্মীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনায় পুলিশের এক এসআইসহ দুইজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশনে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানিয়েছেন মেট্রোরেলের এমডি ফারুক আহমেদ। মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশনে দায়িত্বে থাকা টিএমওর সঙ্গে অসদাচরণ, দায়িত্ব অবহেলা ও শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণের কারণে এমআরটি পুলিশে কর্মরত এসআই মো. মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এক অফিস আদেশে।
অফিস আদেশে বলা হয়, এমআরটি পুলিশে কর্মরত এসআই মো. মাসুদ খানকে গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সচিবালয় মেট্রোরেল স্টেশনে ইনচার্জ হিসেবে দ্বিতীয় বার নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। ওইদিন তিনি দায়িত্ব পালনকালে অনুমান বিকেল ৫টায় মেট্রোরেলের দায়িত্বে থাকা টিএমওর সঙ্গে অসদাচরণ, দায়িত্ব অবহেলা ও শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণ করায় জনসম্মুখে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীসহ এমআরটি পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়।
এতে আরও বলা হয়, এসআই মো. মাসুদ খানকে পিআরবি রুলস-৮৮০ বিধি মোতাবেক গত ১৬ মার্চ অপরাহ্ন হতে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। এমআরটি পুলিশ লাইনে সংযুক্ত থেকে বিভাগীয় নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলবেন।
যাত্রীদের ভোগান্তি ॥ মেট্রোরেল স্টাফদের এই কর্মবিরতিতে এক প্রকার ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। সোমবার সকাল থেকে মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। একক যাত্রার টিকিট মেশিন বন্ধ থাকায় টিকিট কেনা যাচ্ছিল না।
কোনো কোনো প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের গেটের মেশিন চালু না থাকায় এক স্টেশন থেকে কার্ড পাঞ্চ করে প্রবেশ করলেও অন্য স্টেশনে গিয়ে বের হতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। পাসজনিত কোনো সমস্যা সমাধানে কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অধিকাংশ যাত্রী বিনা টিকিটেই মেট্রোরেল ভ্রমণ করেন নানা শঙ্কা নিয়ে। এ ছাড়া সরকারও রাজস্ব হারিয়েছে।