
প্রবাসীদের ভোট নিতে ওআইসির সহযোগিতা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)
প্রবাসীদের ভোট নিতে ওআইসির সহযোগিতা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ওআইসিভুক্ত দশ দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ.এম.এম নাসির উদ্দিন এ সহয়াতা চান। বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলোর প্রতিনিধিরাও সহায়তার আশ্বাস দেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এ কথা জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতের বিতর্কিত পথে আর হাঁটতে চায় না ইসি।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে বেশক’টি বিতর্কিত নির্বাচন করে দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সেই পথে হাঁটতে চায় না। সামনে এগোতে চায়। বর্তমান ইসি নতুন করে ভালো গণতান্ত্রিক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে চায়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে কোনো ব্যবস্থাকেই প্রায়োরিটি দেওয়া হয়নি। তবে তিনটি পন্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে পোস্টাল ব্যালট অকার্যকর। কারণ, আমাদের কাছে যে সময় থাকে এতে প্রবাসীর কাছে ব্যালট পাঠিয়ে ভোট ফেরত আনা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমরা অনলাইনের কথা বলেছি। আজকের বৈঠকেও আমরা এ ব্যাপারে সহায়তার জন্য বলেছি। মিসর বলেছে, তাদের অভিজ্ঞতা ভালো।
পাকিস্তান বলেছে, তাদের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা ভালো। তবে ফুল ফেজে যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়ায়নি। আর তৃতীয়টি হচ্ছে প্রক্সি ভোট। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এই ব্যবস্থা আছে। ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডে কিছু আছে। আমাদের তো পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে জমিজমা ম্যানেজ করা হয়। এ তিনটির মধ্য থেকে মন্দের ভালো একটা ব্যবস্থা বের করতে হবে। সত্যিকার অর্থেই যদি প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে চাই, তাহলে কোনো না কোনো একটা অপশন আমাদের নিতে হবে। একটা কম্বিনেশন বের করতে হবে।
মো. সানাউল্লাহ বলেন, বড় স্কেলে যদি প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে চাই তাহলে প্রক্সি ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। বাকি যে দুটো আছে পাইলটিং হয়ত করা যাবে, কিন্তু বড় স্কেলে যাওয়া যাবে না। তারপরও আমি বলি, এটা এখন বলা প্রিম্যাচুউর হবে।
সানাউল্লাহ বলেন, ৮ এপ্রিল আমরা একটা কর্মশালা করব। সেখানে এক্সপার্টরা থাকবেন। আমরা দেখব কী ধরনের আর্কিটেকচার করতে পারি। তারপর আমরা বলতে পারব কি পদ্ধতিতে ভোট নিলে কত সময় লাগবে, কোনটা ভালো হবে। যে অপশনই থাক, তার তো ফ্রোজেন দিক থাকবেই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মো. সানাউল্লাহ বলেন, এমন একটা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, যেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভোট দিতে প্রবাসীরা কোনো আইনগত জটিলতায় না পড়েন। আমরা প্রক্সি ভোটের কথা বলার পেছনে এটাও একটা কারণ।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত এই বৈঠকে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর সহায়তা চেয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ওআইসিভুক্ত মিশন আমাদের দেশে যারা আছে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। জাতীয় নির্বাচনী কার্যক্রমকে সামনে রেখে অগ্রগতির বিষয়টি অবহিত করেছি।
প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থায় তাদের সহায়তা চেয়েছি। কোনো কোনো মিশন প্রধান তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা একটা আনুষ্ঠানিক প্রোগ্রামের মাধ্যমে ওআইসিভুক্ত দেশসমূহ যেখানে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইন্দোনেশিয়াসহ অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আশাকরি সবাই আগ্রহ দেখাবে। বৈঠকে আমাদের প্রস্তুতি, জনবল, সক্ষমতা, উন্নয়ন কার্যক্রম যা আছে সেগুলো নিয়েই সার্বিকভাবে আলোচনা হয়েছে। ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, দক্ষতা উন্নয়ন, অভিজ্ঞতা বিনিময় তারা যেসব বিষয়ে অংশ নিতে পারেন, সেসব বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছি।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, উন্নয়ন সহযোগী দেশ বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করা হচ্ছে, মতবিনিময় হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ওআইসিভুক্ত দেশের মিশন প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা আজ এসেছিলেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আমাদের বর্তমান কার্যক্রম, গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব কাজ হাতে নিয়েছি সেসব অবহিত করেছি।
পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটের ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা আশা করেছি। বিশেষ করে কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত সহযোগিতার বিষয়ে ও অবজারভার টিম পাঠানোর জন্য তাদের আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা স্বাগত জানিয়েছি এবং যথাসময়ে এগুলো ফর্মালাইজ করব। ইসির বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে সবাই আগ্রহী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোট ছাড়া বিকল্প ভাবছে না ইসি।
মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্য ৪ নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। ওআইসিভুক্ত ১০ দেশের মিশন প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বৈঠকে অংশ নিতে ওআইসভুক্ত ১৯ দেশের মিশন প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরমধ্যে ১০ দেশের মিশন প্রধানরা উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন ৯ দেশের মিশন প্রধানরা। যে ১০ দেশের মিশন প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন সেগুলো হচ্ছে- মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, ব্রুনাই, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কুয়েত ও মরক্কো। আর যে ৯ দেশের মিশন প্রধানরা অনুপস্থিত ছিলেন সে দেশগুলো হচ্ছে-সৌদি আরব, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, কাতার, ওমান, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ও মালদ্বীপ।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুহাদা ওথমান বলেন, প্রবাসীদের ভোটের বিষয়ে সহায়তা দিতে চায় মালয়েশিয়া। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের একটি বড় সংখ্যক প্রবাসী বসবাস করছেন। এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী সংস্কার সব সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করছে মালয়েশিয়া। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমরা অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে আগ্রহী, বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের বিষয়ে।