
ছবি: সংগৃহীত
বিশিষ্ট সাংবাদিক নূরুল কবির বলেছেন, ফ্যাসিবাদ কখনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি একটি প্রক্রিয়া, যা সমাজের চিন্তাধারায় গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। স্বৈরশাসনের দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে সমাজে ভয়ভীতির সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, যা মানুষকে প্রতিবাদ করতে নিরুৎসাহিত করে।
তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও সমাজের একাংশ অবচেতনভাবে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা লালন করছে, যা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা বিরোধিতা করছে, তাদের প্রতি ‘দালাল’ ও ‘এজেন্ট’ তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে, যা ফ্যাসিবাদের অন্যতম লক্ষণ। অতীতে আওয়ামী লীগ ঠিক এভাবেই বিরোধীদের ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ কিংবা ‘রাজাকার’ বলে ব্র্যান্ডিং করত। একই কৌশল হিটলারও ব্যবহার করেছিলেন, যেখানে প্রতিপক্ষকে প্রথমে অপমান করা হতো, তারপর দমন করা হতো।
তিনি সতর্ক করেন, সরকার পতনের পরও যদি সমাজে এই সংস্কৃতি বজায় থাকে, তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ কঠিন হয়ে পড়বে।
নূরুল কবির বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে বিদেশি মিডিয়া সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য ক্ষতিকর। যারা এই আন্দোলনে জড়িত, তারা হয়তো বিপ্লবী চেতনা নিয়ে কাজ করছেন, কিন্তু জনসাধারণ একে নৈরাজ্য হিসেবে দেখতে পারে, যা তাদের সামাজিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীলতা থাকা প্রয়োজন ছিল। সাধারণ ছাত্রদের চেয়ে সংগঠিত নেতৃত্বই একটি আন্দোলনকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
তিনি ভাষা ও আচরণের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে যেভাবে মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, তা সমাজে সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। সামন্ততন্ত্র থেকে পুঁজিবাদে প্রবেশ করার পর ব্যক্তি অপরাধের জন্য পুরো পরিবারকে দায়ী করার প্রবণতা থাকা উচিত নয়।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নূরুল কবির বলেন, দেশকে উন্নত পথে এগিয়ে নিতে সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করা জরুরি। যারা নতুন রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে এগোতে চান, তাদের জন্যও দিকনির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে তারা ভুল পথে না চলে যান এবং গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চা নিশ্চিত করতে পারেন।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/H_TssdJ5Qhc?si=SoCP8ZeCWFBI5KNo
এম.কে.