ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

করোনার টিকা ক্রয়ে বেক্সিমকোর ২২ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৯:০৩, ১৭ মার্চ ২০২৫

করোনার টিকা ক্রয়ে বেক্সিমকোর ২২ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

করোনার টিকা ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে বেক্সিমকো ফার্মার বিরুদ্ধে ২২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পর দুদকের উপপরিচালক আফরোজা হক খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।

সোমবার (১৭ মার্চ) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চার সদস্যের দলটিতে আরও রয়েছেন সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তার, উপসহকারী পরিচালক মো. জুয়েল রানা ও কাজী হাফিজুর রহমান। তারা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার টিকা ক্রয়ের সময় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে একটি অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে, যা ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। সিন্ডিকেটে আরও ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (ডিএমআরসি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার জন্য চুক্তি করে বাংলাদেশ। সরবরাহকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বেক্সিমকো ফার্মাকে। তবে টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করা হয়নি। দর-কষাকষির নিয়ম মানা হয়নি এবং একটি উৎস থেকে কেনার ক্ষেত্রে নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকার যদি সরাসরি সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা কিনত, তাহলে ৬৮ লাখ বেশি ডোজ কেনা সম্ভব হতো।

দুদক সূত্র জানায়, বেক্সিমকো ফার্মা ভারত থেকে আমদানি করা প্রতিটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকায় ৭৭ টাকা করে লাভ করেছে। ৭০ মিলিয়ন ডোজ টিকার জন্য মোট ব্যয় হয় ২ হাজার ১৭৫ বিলিয়ন টাকা। অপরদিকে, চীন থেকে আমদানিকৃত সিনোফার্মার ৩.১৫ মিলিয়ন ডোজ টিকার জন্য ২৭.৪৭৫ বিলিয়ন টাকা ব্যয় হয়েছে, যেখানে প্রতি ডোজের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১০০ ডলার। অথচ সরকারি কমিটি প্রতি ডোজ ১০ ডলারে কেনার অনুমোদন দিয়েছিল। এতে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া, অভিযোগ রয়েছে যে, সালমান এফ রহমান ও জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেটের কারণে গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্স ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন বিলম্বিত হয়। পরে একটি অঘোষিত বৈঠকে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সঙ্গে গ্লোব বায়োটেককে প্রযুক্তি শেয়ারের দাবি জানানো হয়। তবে গ্লোব বায়োটেক এতে রাজি না হলে বঙ্গভ্যাক্সের অনুমোদন আর দেওয়া হয়নি, ফলে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

দুদকের অনুসন্ধান টিম বর্তমানে সংশ্লিষ্ট সকল নথিপত্র সংগ্রহ করছে এবং প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ হলে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হবে বলে জানা গেছে।

এম.কে.

×