ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা, কমলনগরের মেঘনায় অবাধে মাছ শিকার

মো. ফয়েজ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ১৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৫:০০, ১৭ মার্চ ২০২৫

সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা, কমলনগরের মেঘনায় অবাধে মাছ শিকার

ছ‌বি: সংগৃহীত

জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ-এপ্রিল ২ মাস মেঘনা নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুদকরণ নিষিদ্ধ করা হলেও বাধা মানছেনা জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা না মেনে কমলনগরের মেঘনায় প্রকাশ্যে মাছ ধরতে বাধ্য করছে একটি চক্র। 

মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে কোস্ট গার্ড, মৎস্য অফিস, থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও তাদের ঢিলেমিতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে শনিবার সকালে উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার মেঘনা পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, রাতে ৭-৮ নৌকা মাছ ধরে আসছে। প্রকাশ্যে নৌকায় জাল স্তুপ করে আবার দুপুরে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এছাড়াও ওই দিন দুপুরে পাটারিরহাট ইউনিয়নের মাছঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৪-৫টি নৌকা নদীতে মাছ ধরছে। নিষেধাজ্ঞার প্রথম সপ্তাহে মাছ ধরা কিছুটা বন্ধ থাকলেও এখন আর মানা তা হচ্ছেনা। নদীতে অবাধে মাছ ধরে রাতে পিকআপ ভ্যানে নোয়াখালী চৌমুহনী ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার করা হচ্ছে এবং উপজেলা সদর হাজিরহাটসহ বিভিন্ন বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। 

বর্তমান সময়ের দুই প্রভাবশালী নেতা কোস্ট গার্ড, থানা পুলিশ ও মৎস্য অফিসকে ম্যানেজ করে জেলেদের মাছ ধরতে বাধ্য করছেন বলে জানান জেলেরা। এদের মধ্যে পাটারিরহাট ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ও পাটারিরহাট মাছঘাটের সভাপতি রাজ্জাক তালুকদার মেঘনা নদীর লুধুয়া থেকে পাটারিরহাট এলাকায় এবং মাতাব্বরহাট থেকে মতিরহাট পর্যন্ত  উপজেলা যুবদলের সদস্য ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নের (ইউপি) সদস্য মোঃ হেলাল জেলেদের নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানান তারা। এ দু'জনের আন্ডারে ২০-২৫টি নৌকা রয়েছে। ওই নৌকাগুলো সময়োপযোগী সময়ে নদীতে নেমে মাছ ধরছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলে কোন লাভ হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাহেবেরহাট ইউনিয়নের কয়েকজন জেলে কমলনগর প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করে বলেন, সরকার দুই মাস নদীতে মাছ ধরতে নিষেধ করেছে। স্থানীয় হেলাল মেম্বারের নেতৃত্বে কোস্টগার্ডের সিসিকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন মাছ ধরা হচ্ছে। তার সাথে মফিজ মাতাব্বর, আজাদ মাতাব্বর, মালেক মাঝি, সিরাজ মাঝি, শুক্কুর মাঝি,কবির মাঝি,আজাদ মাঝি জড়িত বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে পাটারিরহাট ইউনিয়ন মাছঘাটের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক তালুকদার বলেন, অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি নদীর পাড়ে যান না। যারা অভিযোগ করছে তাদের পুলিশে দেওয়ার জন্য বলেন তিনি।

এদিকে উপজেলা যুবদলের সদস্য ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নের (ইউপি) সদস্য মোঃ হেলাল বলেন, আমি অভিযানের পক্ষে। কোন অপকর্মের সাথে আমি জড়িত নই। তাহলে কারা নিয়ন্ত্রণ করে জানতেে চাইলে তিনি বলেন, "দক্ষিণে রাজ্জাক তালুকদার ও বেলাল মাঝি এসবের সাথে জড়িত। ওদের সাথে কথা বলেন সব তথ্য পেয়ে যাবেন"

কমলনগর কোস্ট গার্ড কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা একদিকে অভিযান দিলে অন্যদিকে মাছ ধরে জেলেরা। এ বিশাল নদী আমাদের একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর ম্যানেজ করার বিষয়টি সত্য নয় বলে তিনি জানান। 

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের নদীতে অভিযান দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। উপরে প্রকাশ্যে মাছ বিক্রি ও পাচার যারা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্যসাহা বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। একটি চক্র প্রতিনিয়ত মাছ ধরছে এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির  সভাপতি মো.রাহাত উজ জামান বলেন, নিষেধাজ্ঞার মুহূর্তে মাছ ধরার বিষয়টি তিনিজানেন না। খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন তিনি। 

আবীর

×