
লিবিয়ায় ভয়ংকর মানব পাচার ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মাফিয়া প্রধান ফখরুদ্দিন-কে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের লিবিয়ায় পাচার, আটকে রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে জড়িত এই পাচারচক্রের প্রধানকে গতকাল (তারিখ) বিকেল ৫:৪৫ মিনিটে EgyptAir (MS970) ফ্লাইটে কায়রো থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর পর আটক করা হয়।
তাকে বিমানবন্দর থেকে কৌশলে পালাতে সহায়তার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ট্রাফিক হেলপার শওকত আলী-কেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফখরুদ্দিন ও তার চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের প্রলোভনে অভিবাসীদের লিবিয়ায় পাচার করত। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে লিবিয়ায় গিয়ে নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন হন—চাকরির বদলে পাচারকারীরা তাদের বন্দিশিবিরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালাত।
পাচারের শিকার একজন ভিকটিম, আশিকুর রহমান সুমন (২১), জানান— "আমাদের ছোট্ট একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। দিনে একবার পঁচা খাবার দিত, পানি পর্যন্ত দিত না। যারা পরিবারের কাছ থেকে টাকা আনতে ব্যর্থ হতো, তাদের লোহার রড দিয়ে পেটানো হতো। অনেককে বিদ্যুতের শক দেওয়া হতো।"
ফখরুদ্দিনের চক্র ভিকটিমদের পরিবারের কাছে ফোন করে নির্যাতনের লাইভ ভিডিও পাঠাত, যাতে স্বজনরা আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত মুক্তিপণের টাকা পাঠায়। কিন্তু টাকা পাঠানোর পরও ভিকটিমদের মুক্তি দেওয়া হতো না—তাদের আবার নতুন মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করা হতো।
সুমনসহ কয়েকজনকে ফখরুদ্দিন মুক্তিপণ আদায়ের পরও বিক্রি করে দেয় অন্য এক চক্রের কাছে। সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও তার ১৬ সহযাত্রী এখনো বন্দি।
কায়রো বিমানবন্দরে আকস্মিকভাবে ফখরুদ্দিনের মুখোমুখি হন সুমন। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে দ্রুত তার ছবি তুলে লিবিয়ায় আটকে থাকা অন্য ভিকটিমদের পরিবারের কাছে পাঠান। পরিবার থেকে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলে বিমানবন্দরে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা গোয়েন্দারা ফখরুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেন।
ফখরুদ্দিনসহ আটক আসামিরা বর্তমানে বিমানবন্দর থানায় আছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফখরুদ্দিনের অন্যান্য সহযোগীদেরও চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।
ফখরুদ্দিনের ক্যাম্প থেকে মুক্তিপণ আদায়ের পরও ১৬ বাংলাদেশি এখনো লিবিয়ার বেনগাজির একটি বন্দিশিবিরে আটকে আছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা ঢাকার বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান— "আমাদের সন্তানদের মুক্তির জন্য লাখ লাখ টাকা দিয়েছি, কিন্তু তারা এখনো বন্দি! ফখরুদ্দিন আমাদের সর্বনাশ করেছে, ওর কঠোর শাস্তি চাই!"
বন্দি থাকা ব্যক্তিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার কাজ করছে।
এই গ্রেপ্তার মানব পাচার প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। ভিকটিমদের সাহস, পরিবারের সহযোগিতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ভয়ংকর এক পাচার চক্রের প্রধান ধরা পড়েছে
মির্জা মসিউজ্জামান /রাজু