
ছবি: সংগৃহীত।
যমুনা নদীর বুকে নির্মিত হয়েছে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অত্যাধুনিক যমুনা রেলওয়ে সেতু। ৫০টি পিলারের ওপর নির্মিত এ সেতুটি ৪৯টি স্প্যান নিয়ে গঠিত, যা ওয়েদার স্টিল প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকবিশিষ্ট এ সেতুটি নির্মাণে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে নির্মিত ১৬,৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে গঠিত এই সেতুটি যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে অবস্থিত। আগামী ১৮ মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। এর আগে, কয়েক দফা পরীক্ষামূলক ট্রায়াল রান শেষে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে সেতুর একটি লাইনে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আলফাত্তা মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান জানান, উদ্বোধনের পর সেতুটি পুরোপুরি চালু হলে এতে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে একসঙ্গে দুটি ট্রেন চলতে পারবে। তিনি বলেন, "এই সেতুতে যেহেতু ডাবল লাইন রয়েছে, তাই ট্রেন ফুল স্পিডে চলবে। আগে যেখানে সেতু পার হতে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট লাগত, এখন মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিটেই ট্রেন এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে পৌঁছাতে পারবে।"
তবে সেতুটি চালু হলেও দুই প্রান্তের সিঙ্গেল রেলপথ বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ১১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ সেতুর পুরো সুবিধা পাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলপথটি ডাবল লাইনে উন্নীত না হলে যমুনা রেলসেতুকে ঘিরে যে শিল্পায়নের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা ব্যাহত হবে।
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ঈদের সময় সড়কে যমুনা সেতু পারাপারে যে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়, নতুন রেল সেতুর ফলে সেই দুর্ভোগ কমবে। তবে সেতুর দুই প্রান্তের সিঙ্গেল রেলপথ ডাবল লাইনে রূপান্তর না হলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুবিধা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না।
সম্প্রতি সেতু পরিদর্শনকালে রেলওয়ের মহাপরিচালক জানান, গুরুত্ব বিবেচনায় সেতুর দুই প্রান্তে ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। অনুমোদন ও অর্থায়ন পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, "যমুনা সেতু পারাপারে এখন যে ট্রেনগুলোর পরীক্ষা করতে হয়, সেটি আর লাগবে না। ফলে সময়ের সাশ্রয় হবে এবং আমরা আরও বেশি ট্রেন পরিচালনা করতে পারব। তবে ব্রিজের দুই পাশে এখনো ডাবল লাইন না থাকায় পূর্ণ সুবিধা পেতে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।"
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর যমুনা রেলওয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশের দীর্ঘতম এই রেল সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে।
নুসরাত