ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

তবে কি ভাগ্য বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের? হবে অন্যতম ধনী দেশ!

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ১৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:৫৬, ১৭ মার্চ ২০২৫

তবে কি ভাগ্য বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের? হবে অন্যতম ধনী দেশ!

ছবি: সংগৃহীত।

পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ হলেও এর সম্ভাবনা বিশাল। দেশের বিস্তৃত সমুদ্রসীমা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এক বিশাল সুযোগ এনে দিতে পারে। যদি বাংলাদেশ যথাযথভাবে এই সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে এটি এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হতে পারে এবং দেশের অর্থনীতির চিত্র বদলে যেতে পারে।

সমুদ্রসীমার গুরুত্ব ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশ আয়তনে ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের একটি দেশ, কিন্তু সম্ভাবনার দিক থেকে এটি অপরিসীম। দেশের বিস্তৃত সমুদ্রসীমা—১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে রয়েছে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত মহীসোপান। এ বিশাল জলসীমা সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করা সম্ভব।

বিশ্বে এমন ৪৪টি দেশ এবং পাঁচটি নির্ভরশীল অঞ্চল রয়েছে, যাদের কোনো সমুদ্রসীমা নেই। অথচ বাংলাদেশ একটি সমুদ্রসীমার অধিকারী দেশ হওয়ায় এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিপিং শিল্পে প্রবেশের অপার সুযোগ পেয়েছে। সম্প্রতি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, “বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট ভাগ্যবান, কারণ তাদের একটি সমুদ্র রয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে উদ্বুদ্ধ করে। ব্যবসার সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভাগ্য বদলে যাবে।”

বাণিজ্য ও যোগাযোগের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে আধুনিক করে তুলতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক করা হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করলে বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

শুধু সমুদ্রপথের উন্নয়নই নয়, বাংলাদেশ তার নিজস্ব শিপিং শিল্পকে আরও সম্প্রসারিত করতে পারে। আন্তর্জাতিক কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় সুযোগ তৈরি হবে।

মৎস্য ও জ্বালানি সম্পদের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমায় প্রচুর মৎস্যসম্পদ রয়েছে। যদি আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা বাড়ানো যায়, তবে রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হতে পারে।

এছাড়া, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ও তেল। ইতোমধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গবেষণা চালিয়েছে এবং অনুসন্ধান ও উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে স্বনির্ভর হতে পারে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশ
বাংলাদেশ পর্যটন খাতেও বিশাল সম্ভাবনাময় একটি দেশ। কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন এবং অন্যান্য উপকূলীয় এলাকাগুলো আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য আরও উন্নত করা হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

সঠিক পদক্ষেপের প্রয়োজন
সমুদ্রসীমাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়।

এক কথায়, শুধুমাত্র সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হতে পারে। এখন সময় সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার।        

নুসরাত

আরো পড়ুন  

×