
ছবি: সংগৃহীত
বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। সকালে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হলো বলে মনে করছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। দ্রুত রায় কার্যকর চান আবরারের পরিবার।
২০১৯ সালের ৬ই অক্টোবর, বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে উদ্ধার করা হয় তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মরদেহ। সেই সময় সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায় প্রথমে হলের ২০১১ নম্বর এবং পরে ২০০৫ নম্বর রুমে নিয়ে নির্যাতনের পর টেনে হিঁচড়ে আবরারকে সিঁড়ির পাশে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। ততক্ষণে নির্যাতনেই প্রাণ যায় আবরার ফাহাদের। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা। ২০১৯ সালের ১৩ই নভেম্বর বুয়েট ছাত্রলীগের ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর দেয়া হয় নিম্ন আদালতের রায়, যাতে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২২ সালেই মামলাটির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছালেও শুনানির উদ্যোগ নেয়নি তৎকালীন সরকারের আইন কর্মকর্তারা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা আপিল শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান ছিল এই মামলাটি। রোববার নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
এ ব্যাপারে আটর্নি জেনারেল মো আসাদুজ্জামান বলেন, "ফ্যাসিজম যত শক্তিশালী হোক মানুষের মনুষ্যত্ববোধ কখনো কখনো জেগে উঠলে সমস্ত ফ্যাসিজমকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিতে পারে এবং সাধারণ জনগণের এই যে প্রতিক্রিয়া ছিল সেই প্রতিক্রিয়ার কারণেই আবরার ফাহাদের এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত হয়েছে।"
রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি আবরারের বাবার। তিনি বলেম, "যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের র্যাগিং আছে সেটা তো অবশ্যই আমরা পরিবর্তন চাই যাতে ছাত্ররা যাতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে, ভবিষ্যতে যাতে আর এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেটা আমরা সবার কাছে আবেদন জানাচ্ছি।"
তবে গত ৬ই আগস্ট এ মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ জানান আবরারের ভাই। তিনি বলেন, "এই বিষয়টা আসলে সম্পূর্ণই আসলে আমাদের জন্য হতাশার। আমরা আসলে অপেক্ষায় আছি যে আছি কবে এদের রায় কার্যকর হবে। আর সেখানে হঠাৎ করে জানতে পারতেছি একজন পালিয়ে চলে গেছে।"
এদিকে রায়ের ন্যায়বিচার পাননি বলে অভিযোগ আসামি পক্ষের আইনজীবীর, জানিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা। আসামীপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, "যে চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সাজা দেয়া হয়েছিল ট্রায়াল ট্রাইবুনালে তাদের জবানবন্দীতে সেই বক্তব্যগুলো নেই।" আবরার হত্যার ঘটনার পরপরই বিক্ষোভের মুখে তিন দিনের মধ্যেই গ্রেফতার করা হয় ২২ জন আসামিকে। প্রথম থেকেই পলাতক ছিল তিনজন। এই তিনজন এবং জেল পলাতক জেমিসহ সবাই মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামী।
আবীর