ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

বাংলাদেশে ধর্ষণের কার্যকরী বিচারে বাধা কোথায়?

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ১৬ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশে ধর্ষণের কার্যকরী বিচারে বাধা কোথায়?

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলায় রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপ একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়, যা বিচার প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করে। যেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের প্রভাব ও ক্ষমতা ব্যবহার করে আইনগত প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন, সেখানে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে, অপরাধীরা বিচার থেকে রক্ষা পেতে পারে এবং ভুক্তভোগী কিংবা তার পরিবার ন্যায়ের অভাবে অবশেষে অন্ধকারে পড়ে থাকে।

যখন রাজনৈতিক এবং ক্ষমতার সম্পর্ক গভীর হয়, তখন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে ধর্ষণ মামলায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন। তারা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে ধীর করে ফেলেন, অথবা তদন্তকারী পুলিশ ও বিচারকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন যাতে মামলার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয় বা তদন্ত ন্যায্যভাবে না হয়। কখনও কখনও, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে, তারা মামলাটি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব প্রয়োগ করেন, যাতে সমাজে বা জনগণের কাছে বিষয়টি আড়াল থাকে।

ধর্ষণ মামলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকদের ওপরও প্রভাব তৈরি করা হয়। রাজনীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারীরা বিচারকের ওপর শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে, যাতে বিচারক নির্দিষ্ট কোনো পক্ষের পক্ষে রায় দেন অথবা বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করেন। এই প্রভাবের ফলে, আদালত সঠিক ন্যায়বিচার প্রদান করতে পারছে না এবং ভুক্তভোগীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে, প্রকৃত অপরাধী শাস্তি থেকে বেঁচে যায় এবং ভুক্তভোগী ন্যায় বিচারের জন্য আকুল হয়ে থাকে।

অনেক সময়, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ধর্ষণ মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক মর্যাদার কারণে তারা মামলাটিকে আড়াল করতে চান, যাতে সমাজে এর কোনো প্রভাব না পড়ে। এই ধরনের প্রচেষ্টার ফলে, ভুক্তভোগীরা তাদের অভিযোগের সঠিক তদন্ত বা বিচার পেতে পারেন না এবং অপরাধীরা শাস্তি থেকে বেঁচে যায়। অনেক সময়, মামলার জন্য একে অন্যকে দায়ী করা, ভিকটিমকে অপমান করা কিংবা তাদের গোপনে প্রভাবিত করা হয়, যাতে মামলাটি চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

ধর্ষণের শিকার নারী বা তার পরিবার অনেক সময় সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ভয় পেয়ে মামলা তুলে নিতে চায়। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই সামাজিক চাপকে কাজে লাগিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকি দেন অথবা তাদের উপরে মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে তারা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। পাশাপাশি, মিডিয়া মাঝে মাঝে ভুল বা একপেশে তথ্য প্রচার করতে পারে, যাতে মামলার গুরুত্ব কমে যায় এবং ভিকটিমকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়। এটি ভুক্তভোগীর মানসিক অবস্থাকে আরও খারাপ করে তোলে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় অন্তরায় সৃষ্টি করে।

ধর্ষণ মামলায় অনেক সময় ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা গোপন বা প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগী অথবা তার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন। শারীরিক বা মানসিকভাবে ভয় দেখানো হয়, এবং কখনও কখনও দুর্বল ব্যক্তিদের ভয় দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করা হয়। এই ধরনের হুমকির কারণে অনেক সময় মামলা ধামাচাপা হয়ে যায় এবং অপরাধীরা শাস্তি থেকে মুক্ত হয়ে যায়।

ফারুক

×