
.
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রয়ের দ্বিতীয় দিন শনিবার দেওয়া হয়েছে আগামী ২৫ মার্চের যাত্রার টিকিট। অনলাইনে বারবার টিকিট বিক্রয় করা হলেও বেশির ভাগ যাত্রী টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। অগ্রিম ট্রেন টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেও অনলাইনে ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। শনিবার সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের ২৫ মার্চের টিকিট বিক্রয় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনলাইনে হিটের (প্রবেশকারী) সংখ্যা বাড়তে থাকে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রেলওয়ে টিকিট সংগ্রহের সাইটে প্রবেশ করেন প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষ। বিক্রি শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যে টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মহব্বত জান চৌধুরী জানান, টিকিট বিক্রি শুরুর পর সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৭৩ লাখ হিট হয়েছে। ঈদযাত্রায় এবার প্রতিদিন ঢাকা থেকে ৩৫ হাজার ৯১৫টি অগ্রিম টিকিট পাবেন যাত্রীরা। এর মধ্যে শনিবার সকালে পশ্চিমাঞ্চলের জন্য নির্ধারিত ১৪ হাজার ৭৬৫টি আসনের বিপরীতে ওই হিট হয়। আর পূর্বাঞ্চলের ১৩ হাজার ৯৮১টি আসনের টিকিট বিক্রি শুরু হয় দুপুর ২টায়। ট্রেনের আগাম টিকিট এখন বিক্রি শুরু হয় ১০ দিন আগে। সেই হিসাবে ঈদযাত্রার আগাম টিকিট শুরু হয় গত শুক্রবার থেকে। ওইদিন বিক্রি হয়েছে ২৪ মার্চের টিকিট। সেদিন খুব বেশি হিট হয়নি বলে জানিয়েছেন রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি সহজের চিফ অপারেটিং অফিসার সন্দীপ দেবনাথ। তিনি শনিবার জানান, ‘আজ (শনিবার) হিট বেড়েছে, গতকালের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। বেলা ৮টা ২০ মিনিটের মধ্যে টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে।’
শনিবার সকাল ৮টা ৩ মিনিটে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বিক্রির সাইটে বেলা প্রবেশ করে দেখা গেছে, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে স্নিগ্ধা ৩৮টি, এসি সিট ৮টি, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধায় ৩টি, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি সিট ৮টি, স্নিগ্ধায় ১৯টি আসন ফাঁকা ছিল। তবে ঠিক দুই মিনিট পর ৮টা ৫ মিনিটে প্রবেশ করে এসি সিট এবং স্নিগ্ধা শ্রেণির কোনো টিকিট পাওয়া যায়নি। দেখা গেছে, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, পার্বতীপুর, নাটোর, খুলনা এবং বেনাপোল স্টেশনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকিট শেষ হয়ে গেছে প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ওইসব স্টেশনের শোভন চেয়ারসহ সব শ্রেণির টিকিট বিক্রি শেষ দেখা গেছে।’
এ বিষয়ে কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদের অগ্রিম টিকিট সব অনলাইনেই বিক্রি হয়। মানুষের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রি শুরুর দিকেই টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। আর এখন যেহেতু অনলাইনে সব টিকিট দেওয়া হচ্ছে এ কারণে মানুষজন কাউন্টারে খুব একটা আসে না। শুক্রবার দুয়েকজন স্টেশনে টিকিট নেওয়ার জন্য এসেছিলেন। আজ তেমন লোকজন নেই।’
এর আগে গত শুক্রবারও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোট টিকিট বরাদ্দ ছিল ৩৫ হাজার ৯১৩টি। ওইদিন ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। শক্রবার সকাল ৮টায় ১৫ হাজার ৭৭৩টি টিকিটের বিপরীতে প্রায় ২১ লাখ হিট পড়ে। দুপুর ২টার পরপরই ২০ হাজার ১৪০টি টিকিটের বিপরীতে হিট পড়ে প্রায় ২৭ লাখ। তবে অধিকাংশ মানুষই টিকিট পাচ্ছেন না বলে যাত্রীরা জানান।
এ বিষয়ে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. নাজমুল হোসেন জানান, আগের যে কোনো ঈদের তুলনায় এবার টিকিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ঈদে টিকিটের সংখ্যা আরও বাড়বে। কোনো ভিআইপি কিংবা রাজনৈতিক দলের চাপে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। শতভাগ টিকিট অনলাইনে।
শুক্রবার সরেজমিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় স্টেশনজুড়ে কোনো ভিড় নেই। ২৩টি কাউন্টারের মধ্যে চালু দুটি কাউন্টার থেকে যাত্রার দিনের ২৫ শতাংশ (শুধু আন্তঃনগর) এবং কিছু কমিউটার ট্রেনের টিকিট বিক্রি হতে দেখা গেছে।
২০২৩ সালের রোজার ঈদের টিকিট বিক্রির মধ্য দিয়ে ঈদযাত্রার শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি শুরু করে রেলওয়ে। আর সার্ভারের চাপ কমাতে সকাল ও দুপুরে দুই শিফটে টিকিট বিক্রির প্রচলন শুরু হয় গত রোজার ঈদে। আগামী ২৬ মার্চের টিকিট বিক্রয় করা হবে আজ রবিবার। এরপর ধারাবাহিকভাবে ২৭ মার্চের টিকিট ১৭ মার্চ, ২৮ মার্চের টিকিট ১৮ মার্চ, ২৯ মার্চের ১৯ মার্চ এবং ৩০ মার্চের টিকিট বিক্রয় করা হবে ২০ মার্চ। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ৩১ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রয় করা হবে বলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান।