ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

জমজমাট বিপণি বিতান ছুটির দিনে মার্কেটে উপচেপড়া ভিড়

জাহিদুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১৫ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২৩:১৯, ১৫ মার্চ ২০২৫

জমজমাট বিপণি বিতান ছুটির দিনে মার্কেটে উপচেপড়া ভিড়

মার্কেটের পাশাপাশি বাইরে হকারদের দোকানেও ভিড় বাড়ছে

ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠছে রাজধানীর বিপণি বিতানগুলো। পবিত্র মাহে রমজানের শুরুর দিকে এবং অফিস খোলার দিনগুলোতে তেমন একটা ভিড় লক্ষ্য করা না গেলেও যতই ঈদের সময় ঘনিয়ে আসছে ততই মার্কেট ও শপিং মলে নারী এবং শিশুদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে থাকে এ ভিড় আরও বেড়ে যায়। 
সরেজমিন শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতাদের এ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। রাজধানীর তেজগাঁও নাখালপাড়া এলাকা থেকে বোনকে নিয়ে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে ঈদের মার্কেট করতে এসেছেন একটি বেসরকারি বিমা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উম্মে হানি লিজা। মাসের এক তারিখেই বেতন ও ঈদ বোনাস পেয়ে যাওয়ায় ভিড় হওয়ার আগেই সেরে ফেলতে চাইছেন ঈদের কেনাকাটা। পরিবারের আট সদস্যের প্রত্যেকের জন্য নিয়েছেন সাধ্য অনুযায়ী ঈদের কাপড়-চোপড়। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে জানান, ইসলামপুর দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের বাজার হওয়ায় প্রায় সবগুলো উৎসবেই এখান থেকে কাপড়-চোপড় কেনা হয়। তবে যেহেতু এটা পাইকারি মার্কেট তাই দুই-এক পিস কঠিন। তাই প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের জন্যও কাপড় নিতে এসেছি। এতে একসঙ্গে অনেক কাপড় কেনায় পাইকারি দামেই কিনতে পারি।
তিনি বলেন, মানভেদে এখানে বিভিন্ন ধরনের কাপড় আছে। তবে আগের সময়ের মতো বিদেশী কাপড়-চোপড়ের আধিপত্য নেই। এখন বেশির ভাগই দেশী প্রতিষ্ঠানের পণ্য হলেও মান অনেক ভালো। আর দামও আগের চেয়ে অনেক কম মনে হচ্ছে। প্রতিটি দেশীয় সাদাবাহার থ্রি পিস এক হাজার টাকা, আগানুর ১৩শ’ টাকা এবং ইন্ডিয়ান জমজম সুইস লোন ৮৫০ টাকা করে নিয়েছেন। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে মার্কেট করতে চাইলে ইসলামপুরই উপযুক্ত জায়গা। 
এদিকে গাজীপুর থেকে স্বামীকে নিয়ে ঈদ বাজার করতে এসেছেন একটি বেসরকরি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া বৃষ্টি। কিছুদিন আগেই বিয়ে হওয়ায় শ^শুড়বাড়ির আত্মীয়স্বজনের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছেন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে জানান, দেশীয় সাদাবাহার, আগানুর ও ইন্ডিয়ান জমজম সুইস লোনের ১০টি থ্রি পিস কিনেছেন। গরপড়তায় প্রায় প্রতিটির দাম এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে। তিনি বলেন, অন্য কোনো মার্কেটে গেলে এসব কাপড়ই কিনতে হয় ১৬শ’ থেকে ২ হাজার টাকায়। বড় বিপণি বিতানে পাকিস্তানি থ্রি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। তাই এখানে আসা। 
রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর মাসের শুরুতেই রমজান হওয়ায় ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। অন্য বছরগুলোতে সাধারণত রমজানের প্রথম ২০ দিনে তেমন ক্রেতা উপস্থিতি না থাকলেও এবার তার ব্যতিক্রম। এবার আগেভাগেই বিক্রি শুরু হয়েছে। আর প্রথম ১০ রোজা অতিক্রমের পর প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় থাকছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল না হওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতারা রাতের তুলনায় দিনে কেনাকাটা করতে বেশি আগ্রহী।
এদিকে ঢাকা নিউ মার্কেটের শাড়ি বিক্রেতা আব্দুর রউফ বলেন, ঈদের আগে সাধারণত ছুটির দিনগুলোতে ভিড় থাকে, এবারও তেমনই। তবে বিগত ঈদগুলোর চেয়ে এবারে ভিড়টা একটু বেশি, বেচাকেনা বেশ ভালো। তবে ভিড় বেশি থাকায় ক্রেতাদের তেমন সময় দেওয়া যাচ্ছে না, পছন্দ হলে দ্রুতই পণ্য ছেড়ে দিচ্ছি।
থ্রি-পিসের পাশাপাশি নারী ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে শাড়ির দোকানগুলোতে। সাধারণত মধ্যম মানের শাড়িগুলোর প্রতিই ক্রেতাদের চাহিদা বেশি। এসব শাড়ি ১২শ’ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। তবে এর চেয়েও বেশি দামের পোশাকও বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
কোন কোন কাপড়ের চাহিদা এবার বেশি- জানতে চাইলে মৌচাক মার্কেটের আবির ফ্যাশন হাউজের বিক্রয় কর্মী সোহেল বলেন, এবার সুতি শাড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। স্ক্রিন বা ব্লক প্রিন্ট, হ্যান্ড পেইন্টের মাধ্যমে ফুলপাতা আর জ্যামিতিক নকশা ইত্যাদির পাশাপাশি হাতের কাজ ও মেশিনের কাজ থাকা শাড়িগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। 
সোহেল জানান, দেশি তাঁতের শাড়ি, জামদানি প্রিন্টের হাফ সিল্ক ও সুতি শাড়ির চাহিদা রয়েছে। এসব শাড়ি এক হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেড় হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে সিল্ক, মসলিন বা জর্জেটের কাপড়ে এমব্রয়ডারি, কাটওয়ার্ক, পুঁতি ও জরির কাজ করা শাড়িগুলো বিক্রি হচ্ছে। 
শুধু মার্কেটগুলোতেই নয়, শপিংমলগুলোতেও ক্রেতার ভিড় ছিল দেখার মতো। ধনীদের মার্কেট হিসেবে পরিচিত বসুন্ধরা শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিশাল এই শপিংমলে এক ছাদের নিচে পোশাক, গয়না, কসমেটিকস, ক্রোকারিজ, জুতা, পারফিউমসহ সব ধরনের পণ্য কিনতে পারছেন ক্রেতারা। মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে এই মলে ঈদ বাজার করতে এসেছেন গৃহিণী সাদিয়া জামান। তিনি বলেন, অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় এখানে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাটাকা করা যায়, তাই আসা। এখনো কিছু কেনা হয়নি, ঘুরে দেখছি। ইফতারের পর কেনাকাটা করব।
সবচেয়ে বেশি ক্রেতা সমাগম দেখা গেছে মলের ইনফিনিটি, আড়ং, টুয়েলভ, জেন্টল পার্ক, প্লাস পয়েন্ট, কান্ট্রি বয়, লা রিভ, আর্টিসান ও টপ টেন ব্র্যান্ডের শপগুলোয়। ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান শুরুর পর এটা দ্বিতীয় সাপ্তাহিক ছুটি সময়। তাই ক্রেতাসমাগম বেশি। তবে এখনো বেচাকেনা সেভাবে জমে ওঠেনি। কারণ অনেকেই এখন পর্যন্ত ঈদ বোনাস পাননি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে বিশেষ করে আগামী সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে ও এর বাইরে অন্য দিনেও ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে।
শুধু নারীদের নয়, পুরুষদের পোশাকের দোকানগুলোতেও ভিড় দেখা গেছে। ইস্টার্ন মল্লিকার দেশী খাদি দোকানের ম্যানেজার আবুল কালাম বলেন, আমাদের এখানে দেড় হাজার থেকে ৭-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। তবে মধ্যম দামের পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। 
এবার ছেলেদের পাঞ্জাবিতে নতুন নতুন বৈচিত্র্য এসেছে। বিভিন্ন ডিজাইনের এবং বিভিন্ন রঙের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের পাঞ্জাবি রয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর গরম বেশি থাকায় স্বস্তির বিষয়টি মাথায় রেখে সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবির চাহিদা একটু বেশি। পাশাপাশি লিলেন, কটন, সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক কাপড়ের পাঞ্জাবিও পাওয়া যাচ্ছে। এসব কাপড়ে রয়েছে এমব্রয়ডারি ও প্রিন্টের কাজ। লং পাঞ্জাবিগুলো দেড় হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে। অপরদিকে শর্ট পাঞ্জাবি ১২শ’ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। অপরদিকে গর্জিয়াস কাজ করা পাঞ্জাবিগুলো সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

আরো পড়ুন  

×