
.
জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক নেই চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালে। এ রোগের টিকা না পেয়ে ফার্মেসি থেকে টিকা কিনছেন রোগীর স্বজনেরা। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জলাতঙ্ক রোগের র্যাবিস টিকা সরবরাহ না থাকার বিষয়টি নোটিস বোর্ডে উল্লেখ করে দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে সরকারি বিনামূল্যের এ ভ্যাকসিন সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় ব্যাপক ভোগান্তিতে রোগীরা। চট্টগ্রামের শুধু এ হাসপাতালে নয়, জেলার ১৫ উপজেলার কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই নেই র্যাবিস ভ্যাকসিন। এ সংকটের কারণে প্রতিদিনই প্রায় ৩শ’ রোগী বাইরে থেকে টিকা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও জানেন না কখন নাগাদ এ টিকা সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালের অদূরেই পাইকারি ওষুধের বাজার হাজারি লেন। সেখানে বিপুল পরিমাণ র্যাবিস টিকা পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালে এ টিকা না থাকায় হাজারি লেন থেকে রোগীর স্বজনেরা এ টিকা কিনে আনছেন। এসব ফার্মেসি থেকে প্রতি ভ্যাকসিন ৪৭০ থেকে ৫শ’ টাকায় কিনে এনে হাসপাতালের নার্সদের দিচ্ছেন রোগীর স্বজনেরা। তারপর তারা রোগীদের এ টিকা পুশ করছেন। অবশ্য র্যাবিস প্রতি ভ্যাকসিন ৪ জনে নিতে পারেন। ফলে প্রতি ডোজে খরচ পড়ে ১২০-১৫০ টাকা। প্রতিজন রোগীর নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী তিনটি র্যাবিস টিকা দিতে হয়। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৬০ থেকে ৪৫০ টাকা। আবার প্রাণীর কামড়ে ক্ষত কিংবা রক্তক্ষরণ হয়েছে এসব রোগীকে র্যাবিসের পাশাপাশি দিতে হয় আরআইজি ভ্যাকসিন। এ টিকা তিনটি একসঙ্গে একবার দিতে হয়, এতে ব্যয় হয় রোগীর ৮২০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা।
জানা গেছে, জেনারেল হাসপাতালে এসব টিকা প্রয়োগে ৫ থেকে ১০ টাকার সিরিঞ্জও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের। চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালের পাশেই টেরিবাজার এবং আফিমের গলি। অপরদিকে জনবহুল অধ্যুষিত এলাকা পাথরঘাটা, সাবএরিয়া, চকবাজার। এসব এলাকায় লাখ লাখ মানুষ বাস করেন। কুকুরের কামড় কিংবা বিড়ালের কামড়ে ক্ষত হলে তারা সুরক্ষিত থাকতে টিকা নিতে আসেন জেনারেল হাসপাতালে। এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, কখনো টিকা থাকে না এ হাসপাতালে। তিন ডোজের টিকা কিনেই গ্রহণ করতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, গত মাস থেকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নেই। অপরদিকে চট্টগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও নেই কোনো জলাতঙ্কের টিকা। একইভাবে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালেও নেই জলাতঙ্কের টিকা। রোগী ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে দ্রুতভাবে এ সব ভ্যাকসিনের জোগান দিলে মানুষ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। অনেকে এখন বাসায় বিড়াল ও কুকুর পোষে। ফলে আগের চাইতে এ টিকার চাহিদা বেশি। অনেকের সামর্থ্য থাকলেও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যদের টিকা কেনার সামর্থ্য নেই। ফলে প্রাণীর কাপড়ে জখম হয়ে হাসপাতালে এলে টিকা না পাওয়ায় ভ্যাকসিনবিমুখ হচ্ছেন। এ কারণে বাড়ছে জলাতঙ্কের ঝুঁকি। রোগীরা বলছেন, অ্যান্টি র্যাবিস ভ্যাকসিন হাসপাতালে থেকে জোগান দিলেই ভালো হয়।
উপজেলার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুরে কামড়ানো রোগীদের টিকা দিত। এখন দেয় না। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে কবিরাজি চিকিৎসা নিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছে। অনেকে ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়ে চিকিৎসার বদলে জলাতঙ্কের ঝুঁকি তৈরি করছে।