
শিশু আছিয়ার নির্মম ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে হিজড়া নেত্রী রানী চৌধুরী কঠোর ভাষায় সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের ছোট বোন আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাকে কিন্তু কোন পোশাকের জন্য ধর্ষণ করা হয়নি। সে একটা শিশু বাচ্চা। তার কি অপরাধ ছিল? এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ফ্যামিলি থেকেই সে ধর্ষিত হয়েছে। বাইরের কেউ নয়, সে ফ্যামিলিতেই ধর্ষিত হয়েছে।"
রানী চৌধুরী আরও বলেন, "আমার কাছে মনে হয়, ফ্যামিলির শিক্ষাটাই সবচেয়ে বড়। কিন্তু সে তো কোন পোশাকের জন্য ধর্ষিত হয়নি। সো, পোশাকটা এখানে ইম্পর্টেন্ট না। ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ এটাকে কিভাবে দেখছে। আমি একটা ড্রেস পরে বের হলাম, মানুষ আমাকে কিভাবে দেখবে,এটাই আসল কথা। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।"
রানী চৌধুরী বলেন, "পোশাক হচ্ছে সবার স্বাধীনতা। আমি কি পড়ে বের হব, আমি কি পড়ে যাব,এটা সম্পূর্ণ আমার স্বাধীনতা। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।"
তিনি হিজড়াদের প্রতি সমাজের বৈষম্যমূলক আচরণের কথাও তুলে ধরেন,"বাংলাদেশে যেখানে হিজড়াদের অধিকারই নেই, তারপরও আমরা যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আমাদেরকে সমাজ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমরা তো সমাজের কাছ থেকেই নিরাপত্তা চাইব।"
"হিজড়ারাও কিন্তু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এই বিচারগুলো আমরা কোথায় পাব? কারণ আমাদের জন্য সেই আইনটাই নেই। আমাদের আগে সেই আইনটা তৈরি করতে হবে। এমন আইন করতে হবে, যেখানে নারী, পুরুষ, হিজড়া,সবার জন্য সমান বিচার নিশ্চিত হবে।"
তিনি আরও বলেন, "প্রথমেই তো হিজড়ারা পড়াশোনা করতে পারে না, স্কুলে যেতে পারে না। যদি এমন কোনো আইন থাকত যে, তারা জন্মের পর থেকেই পরিবারে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এবং পরিবার থেকেই শিক্ষা নিয়ে স্কুলে যেতে পারবে,তাহলে এই বৈষম্য দূর হতো।"
আছিয়ার মতো আরও অনেক শিশু প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে রানী চৌধুরী বলেন, "শুধু বাচ্চা শিশু নয়, হিজড়ারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু এসব ঘটনা নিউজেও আসে না। কাল আছিয়া মারা গেল, তার পরের দিন সাতক্ষীরায় আরেকজন ধর্ষিত হলো,এটা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।"
শাস্তির কঠোরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এমন একটা শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে, এ ধরনের অপরাধ আর করা যাবে না। অনেকেই বলে ফাঁসি, কিন্তু এটা মুখ্য না। অপরাধীকে এমন শাস্তি দিতে হবে, যা দেখে অন্যরা শিউরে উঠবে।"
নারী, শিশু ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে রানী চৌধুরী বলেন, "নারী-পুরুষের পাশাপাশি হিজড়াদের জন্যও সুরক্ষা আইন করতে হবে, যাতে তারা ন্যায়বিচার পেতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, "আমি একজন হিজড়া মানুষ। আজকে আমি সমস্ত হিজড়া জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এখানে এসেছি। আন্দোলন করা আমার সামাজিক দায়িত্ব। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি যতদিন থাকবে, ততদিন আমাদের সমাজ এগোতে পারবে না।"
সূত্র :https://tinyurl.com/yck85jyr
আফরোজা