ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

শপিংমলে মার্কেটে নানা অফার

ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে কেনাকাটা

নাজমুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ১৩ মার্চ ২০২৫

ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে কেনাকাটা

.

ঈদুল ফিতরকে  সামনে রেখে জমে উঠেছে কেনাকাটা।  ভিড় এড়াতে এবার  রমজানের প্রথমদিকেই কেনাকাটা শুরু করেন রাজধানীবাসী। মার্কেটগুলোতে এখনি ঈদের আমেজ। দশম রমজানের পর থেকে ভিড় ক্রমে বাড়ছে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গেল মাসের বেতন পেয়েছেন। অনেকে বোনাসও পেয়েছেন। যে কারণে এবার ঈদ বাজার ঘিরে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।  
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তান, নিউমার্কেট, রাজধানী মার্কেট, বসুন্ধরা শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুর ১০ ও ইসিবি চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ব্র্যান্ডের দোকান-আউটলেট এমনকি ফুটপাতেও ব্যাপক বেচা-কেনা লক্ষ্য করা যায়। অন্য বছরগুলোতে রোজার সময় বিকেলে কিংবা সন্ধ্যার পর থেকে মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার জন্য মানুষজনের উপস্থিতি দেখা গেলেও এ বছর দুপুরের আগে থেকেই মানুষজন মার্কেটে ভিড় করছেন। এতে করে আগে থেকেই ঈদের বাজারে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মার্কেট এবং শপিংমলগুলোতে সকাল থেকেই শুরু হচ্ছে ব্যস্ততা। নানা ধরনের অফার এবং ঈদ স্পেশাল কালেকশন বিক্রি করা হচ্ছে জনপ্রিয় শপিংমলগুলোতে।
পোশাকের দোকানগুলোতে পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি, টিশার্ট, নারীদের শাড়ি, থ্রিপিস, ওয়ান পিস, কুর্তা এবং বাচ্চা ও শিশুদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, ফ্রক, গেঞ্জিসেটসহ আধুনিক ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী এবং গহনার দোকানগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। 
দোকানগুলোতেও সিজনাল ডিসকাউন্ট ও ফেস্টিভ অফারের এবং নির্দিষ্ট ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করলেও মিলছে ছাড় এবং ক্যাশব্যাক অফার। দোকানিরা জানান, এ বছর ঈদের কেনাকাটা আগেভাগেই শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ভিড়। এবার নারী, পুরুষ ও শিশুর জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের নতুন পোশাক বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক হারে। এছাড়াও মসলিন, সিল্ক, জামদানি, কাতান, কাশ্মীরী কাজ করা শাড়ি ও লেহেঙ্গা, পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, টিশার্ট এবং শিশুদের জন্য নানা রঙের আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বেশি। গরমকে প্রাধান্য দিয়ে ক্রেতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুতি কাপড়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।  
রাজধানীর মগবাজার আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মী নিয়াজ মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, সকাল থেকেই ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো।  অন্য বছরের তুলনায় এবার আগে থেকেই কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় দেখতে পাচ্ছি। দুপুরের পর থেকে  ক্রেতাদের উপস্থিতি আরও বেড়ে যায়। সবচেয়ে জমজমাট সময় যায় বিকেল এবং সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত। পাঞ্জাবি, শাড়ি, ওয়ান পিস ও বাচ্চাদের পোশাকের পাশাপাশি বিভিন্ন কসমেটিকস আইটেম, গহনা, লেডিস ব্যাগ-পার্টস অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। আমরা বিক্রয়কর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছি।
জমজমাট অবস্থা দেখা গেছে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট এবং এলিফ্যান্ট রোড এলাকায়। এসব এলাকায় মার্কেট, শপিং মলের পাশাপাশি ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পোশাক, গহনা ও কসমেটিকস। এরমধ্যে নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট এবং নূরজাহান ম্যানশনে মহিলা ক্রেতার ভিড় বেশি দেখা গেছে। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট এবং গ্লোব শপিং সেন্টারের শার্ট-প্যান্টের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি ছিল তরুণ ক্রেতাদের। আর সায়েন্সল্যাবের বাইতুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে পাঞ্জাবি-পায়জামার দোকান এবং এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
পারভীন আক্তার নামের এক ক্রেতা বলেন, যেহেতু বাচ্চার স্কুল বন্ধ সেজন্য শেষ সময়ে ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাব। তাই প্রিয়জনের জন্য কাপড় কেনাকাটা করছি। ব্যবসায়ীরা দাম কিছুটা বেশিই চাচ্ছেন। দামাদামি করে নিতে হচ্ছে। তাছাড়া এবার সবাই রোজা রেখে কষ্ট হলেও দিনের বেলাতেই কেনাকাটা শেষ করতে চাচ্ছেন। সেজন্য ভিড়ও একটু বেশি।
ঈদ বাজারে এবার শিশুদের পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, টিশার্ট, প্যান্ট, কাবলি সেট।  শিশুদের কাপড়ের দাম এবার বেশি বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। এদিকে, মেয়েদের পোশাকের মতো ছেলেদের পোশাকের ডিজাইনেও এসেছে পরিবর্তন। আর পণ্যের ভিন্নতায় দামের মাত্রায়ও রয়েছে কম-বেশি।
বিক্রেতারা বলছেন, মানুষের মধ্যে ছিনতাইয়ের একটি আতঙ্ক রয়েছে। যার কারণে অনেকেই দিনের বেলাতে কেনাকাটা করার প্রতি ঝুঁকছেন। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের বিক্রেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, অন্য বছর সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যাপক বেচাকেনা হয়েছে। এবার অধিকাংশ ক্রেতাই দিনের বেলা কেনাকাটা করে ফেরত যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। 
গত কয়েক বছর ভারতীয় পোশাকের একক আধিপত্য থাকলেও এবার চাহিদা বেড়েছে পাকিস্তানি পোশাকেরও। বিক্রেতারা বলছেন, রোজার প্রথমদিকে তেমন চাপ না থাকলেও এখন উপস্থিতি বেড়েছে ক্রেতাদের। ক্রেতার চাপ বাড়ায় ঈদের বাজার জমজমাট হওয়ার প্রত্যাশা তাদের। 
এদিকে, আজকের পর শুক্রবার থেকেই পুরোদমে জমে উঠবে ঈদ কেনাকাটা। এমনটাই বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এদিকে ক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে প্রশাসনের কঠোর নজর দারি রয়েছে। আর অনেক ক্রেতা নিরাপত্তার জন্য কেনাকাটার বিল পরিশোধ করছেন ব্যাংকের কার্ড দিয়ে। সময়ের চাহিদা বিবেচনায় ব্যাংকগুলোও এখন এদিকে মনোযোগী হয়েছে।  সব মিলিয়ে কার্ড লেনদেন দ্রুত বাড়ছে। 

×