এদেশের নারীরা চিরকালই সাহসী ও সংগ্রামী। প্রয়োজনে কোমলতা পরিহার করে ধারণ করতে পারে রুদ্র মূর্তি। আপন অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে হতে পারে নির্ভীক। সর্বশেষ সেই নজির মিলেছে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে। চেপে বসা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা এই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন অকুতোভয় নারী শিক্ষার্থী থেকে গৃহবধূ, শিক্ষিকা থেকে সেবিকাসহ বিক্ষুব্ধ নারীসমাজ। বুলেট, বোমা, টিয়ারশেল থেকে লাঠির বাড়ি কোনো কিছুতেই তাদের দমানো যায়নি।
আর নারীর সেই প্রতিবাদী রূপের ধারাভাষ্যময় এক প্রদর্শনী চলছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৫ নম্বর গ্যালারিতে। শিরোনাম ‘দ্য ব্রেভ ডটারস অব জুলাই’ কিংবা ‘জুলাইয়ের বীর কন্যা’। দেশের সাম্প্রতিক গণআন্দোলনে নারীর অবদান মেলে ধরতে যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে জুলাই রেভ্যুলেশনারী এলায়েন্স, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পুনাব) এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে জুলাই বিপ্লবের দুর্লভ কিছু ছবি। সঙ্গে রয়েছে গণঅভ্যুত্থাননির্ভর পোস্টার, ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার ও শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন। প্রতিবাদী প্রকাশের এই প্রদর্শনীটি নজর কেড়েছে সচেতন নাগরিক সমাজসহ সাধারণ মানুষের। এর বাইরে পৃথকভাবে শিল্পায়োজনটি আলোড়িত করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। ছোট বড় ফ্রেমে বাঁধানো ছবিগুলো ঝুলছে প্রদর্শনালয়ের দেয়ালে।
আলো-ছায়ার খেলায় ক্যামেরাবন্দি তেমনই এব ছবিতে ধরা দিয়েছে আন্দোলনকালের উত্তাল শাহবাগ। ভয়কে জয় করে রাজপথে নেমে আসা ওই আলোকচিত্রের পুরো ফ্রেমটাই যেন এক জনারণ্য। যতদূর চোখ যায় নজরে পড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। বিক্ষুব্ধ ওই জনতার সমাগমে কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আর এই প্রতিবাদী সমাগমে শামিল হওয়া মানুষের মধ্যে গুটিকয় বাদ দিলে সকলেই শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে আবার নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। সামনের সারিতেই ভাসছে তাদের বিদ্রোহী মুখগুলো। কেউ কণ্ঠে তুলে নিয়েছে স্বৈরশাসকের পদত্যাগের দাবি জানানো ঝাঁঝালো স্লোগান। কেউ বা হাতে তুলে নিয়েছে লাল-সবুজের প্রাণপ্রিয় পতাকা।
কারো কপালে লেপটে আছে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো সেই পতাকা। একটি ছবিতে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচু করে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় দুই নারী শিক্ষার্থীকে। আরেক ছবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া দুই নারী শিক্ষার্থীকে নির্দয়ভাবে পেটাতে দেখা যায় এক দুর্র্বৃত্তকে। এসব দেখতে দেখতে চোখ চলে যায় প্রদর্শনালয়ের মাঝে উপস্থাপিত কাচে ঘেরা একটি বাক্সের ওপর। শহীদের স্মৃতির সাক্ষ্যবহ ওই বাক্সে দেখা মেলে গলার মালা, হাতের চুড়ি, পরিচয়পত্রসহ শিক্ষার্থীর রক্তভেজা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোশাক।
পোস্টারগুলোতেও উঠে এসেছে আন্দোলনকালের তাৎপর্যময় ও হৃদয়স্পর্শী নানা কথা। তেমনই এক পোস্টারে লেখা রয়েছে ‘স্যার মিছিলে তো এলেন না, অন্তত জানাজায় আসিয়েন।’ আরেক পোস্টারে লেখা রয়েছে-‘আপনি একজনকে মারবেন, দশজন দাঁড়বো। দশজনকে মারবেন, হাজারজন দাঁড়িয়ে যাবো।’
আগামী ৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আফরোজা
