
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের গণমাধ্যম শিল্পে সাংবাদিকদের প্রতি চরম বৈষম্য ও শোষণের অভিযোগ তুলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, দেশে সাংবাদিকতা এখন "রক্তচোষা শিল্পে" পরিণত হয়েছে, যেখানে মালিকরা বছরের পর বছর কম বেতনে সাংবাদিকদের শোষণ করছেন, অথচ তাদের কঠোর পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য দিচ্ছেন না।
একজন মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার বা ফটোসাংবাদিক সারাদিন মাঠে পরিশ্রম করেও ন্যূনতম সম্মানী পান না, অথচ তার কাজ থেকে মালিকরা বিপুল অর্থ উপার্জন করছেন। শফিকুল আলম বলেন, “আপনার একটা ভালো ভিডিও ইউটিউবে বা ফেসবুকে ভাইরাল হলে হাজার হাজার ডলার উপার্জন করা যায়, কিন্তু যিনি ভিডিওটি তৈরি করলেন, তাকে ৫০০ টাকাও দেওয়া হয় না। এই বাস্তবতা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি আরও বলেন, মালিকপক্ষ ও সম্পাদকদের আশেপাশে থাকা কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ভালো বেতন পেলেও, বেশিরভাগ সাংবাদিকের বেতন অত্যন্ত কম। "অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা মাত্র ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা বেতনে কাজ করছেন, আর গ্রামাঞ্চলের অনেক সাংবাদিক কোনো বেতনই পান না। এটা অকল্পনীয় এক পরিস্থিতি,” মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি মনে করেন, সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় ইউনিয়নগুলো ব্যর্থ হয়েছে। শ্রমজীবী অন্যান্য পেশার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, “গার্মেন্টস শ্রমিকরা সংগঠিত হয়ে তাদের ন্যূনতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা করতে পেরেছে, এমনকি তারা ৯% বেতন বৃদ্ধিও আদায় করেছে। অথচ সাংবাদিকদের ইউনিয়ন তাদের দাবি আদায়ে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।”
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের জন্যও একটি ন্যূনতম বেতনের কাঠামো থাকা জরুরি। “৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকার নিচে সাংবাদিকদের বেতন দেওয়া উচিত নয়। যারা এই মানদণ্ড মানতে পারবে না, তাদের পত্রিকা বা ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া উচিত।”
শফিকুল আলম আরও অভিযোগ করেন, অনেক সংবাদমাধ্যম সম্পাদক চুরি করা কনটেন্ট ব্যবহার করে মুনাফা করছে। “তারা অন্যদের রিপোর্ট, ছবি ও ভিডিও চুরি করে চলেছেন, অথচ মাঠপর্যায়ের প্রকৃত সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করেন না,” বলেন তিনি।
তিনি সরকারে থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকদের এই দুঃখজনক অবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন বলে জানান। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকরা বর্তমানে সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রধান আয়ের উৎস হলেও, তাদেরই সবচেয়ে কম বেতন দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে সাংবাদিকদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সমাজের বিবেক, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরার দায়িত্ব আমাদের। অথচ নিজেদের শোষণের বিরুদ্ধে আমরা মুখ খুলতে পারি না। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না।”
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/pkWSB74IjZA?si=DJFG_EOfXJNEG6oy
এম.কে.