
শেখ হাসিনা, ইমরান এইচ সরকারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
একই সঙ্গে অপর মামলায় গ্রেপ্তার থাকা জিয়াউল আহসানসহ চারজনকে এই মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ মে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট মূলে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্য বিশিষ্ট ট্রাইব্যুনাল বুধবার এ আদেশ দিয়েছেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এ সময় আদালতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, গাজী এমএইচ তামিম, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, তারেক আব্দুল্লাহ ও শাইখ মাহাদী।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত অবশিষ্ট তিনজন হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক আইজিপি ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ডা. ইমরান এইচ সরকার। অপরদিকে, এই মামলায় অভিযুক্ত এবং আগে থেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা চারজন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোল্লা নজরুল ইসলামকে আগামী ১২ মে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট মূলে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ে সংঘাতে মৃত্যুর ঘটনা ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনার সময়ে গুমের অভিযোগেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে ট্রাইব্যুনালে।
ইতোমধ্যে ‘গণহত্যা’ ও ‘গুমের’ দুই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ সরকার তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানালেও ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। হত্যা, গণহত্যার বিভিন্ন অভিযোগের পাশাপাশি শাপলা চত্বরের ঘটনা নিয়ে ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ জমা পড়ে গত আগস্টে।
শেখ হাসিনা ছাড়াও ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় সেখানে। নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।
শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে সংগঠনটি। সেই সমাবেশ ঘিরে পুরো মতিঝিল এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা আর তা-ব চলে। পরে সেই রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরানো হয়। শাপলা চত্বরের অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে সে সময় এক প্রতিবেদনে দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।
লাশ পোড়ানোর মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার ॥ সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশের নায়েক মো. সোহেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার দশজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর নায়েক মো. সোহেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
১২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ॥ সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকসহ ১২১ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে খুলনায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নাঈম শিকদার নামের এক ব্যক্তি চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এ অভিযোগ করেন বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অভিযোগে নাঈম শিকদার বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় ৪ আগস্ট তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তার শরীরে এখনো চার শতাধিক গুলি আছে। তার পিঠে একটা বড় গুলি লেগেছিল, যা অনেক অনুরোধের পর অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়াই একজন চিকিৎসক বের করে দেন।
অভিযোগে বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন, খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, বাগেরহাট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহারসহ ১২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।