ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

সেমিনারে রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত আরও চীনা কোম্পানি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ১২ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত আরও চীনা কোম্পানি

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত চীনা কোম্পানি

টেক্সটাইল ও পোশাক, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আরও কোম্পানিকে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ইয়াও ওয়েন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে  একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক এক সেমিনারে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। 
ইয়াও বলেন, চীন বাংলাদেশের জন্য সে দেশের মুক্তকরণ ধারাবাহিত]কতা সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে বের হওয়ার আগে সকল করযোগ্য পণ্যের শূন্য-শুল্ক ব্যবস্থা প্রদানের প্রতিশ্রুতি  দিচ্ছে। মানুষ বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করে, সে সমর্থনের বাস্তবতা হলো অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪টি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে মোট ২৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও  বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি। চীন-বাংলাদেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের বৃক্ষকে নতুন যুগে আরও ফলপ্রসূ করতে চেষ্টা অব্যাহত রাখি।
সেমিনারের আয়োজনকারী‘সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস’র নির্বাহী পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মুল প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে অর্ধদিনব্যাপী এ সেমিনার শুরু হয়। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রাক্তন রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর এবং স্বাধীন গবেষক ও বিশ্লেষক সৈয়দ শাহনাওয়াজ মহসিন সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ ও চীন আরও সুষম বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, বাংলাদেশের শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে এবং টেকসই অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব জোরদার করতে পারে বলেও জানান চীনের রাষ্ট্রদূত।
সেমিনারে উল্লেখ করা হয়েছে যে আঞ্চলিক কূটনীতিতে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রে, চীনের ভূমিকা স্বীকৃত, তবে আরও সক্রিয় অবস্থানের প্রত্যাশা রয়ে গেছে। এটিও তুলে ধরা হয়েছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক জনগণের সুবিধার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, বাংলাদেশ ও চীন  এই দুই দেশের জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার জন্য তাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন। এই বছর বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অতীতকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি ঐতিহাসিক সুযোগের মুখোমুখি। তিনি বলেন, এই বছরের শুরু থেকে, বাংলাদেশ ও চীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন স্তরে ঘন ঘন বিনিময় করেছে।
রাষ্ট্রদুত বলেন, গত ১০ মার্চ বাংলাদেশী রোগী, ডাক্তার এবং ভ্রমণ সংস্থাগুলির প্রথম দলকে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে চিকিৎসা পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং হাসপাতাল পর্যালোচনার জন্য সেখানে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, ভবিষ্যতে, তারা তাদের সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত করবে, বাংলাদেশী রোগীদের আরও বৈচিত্র্যময় এবং মানসম্পন্ন চিকিৎসা পছন্দ প্রদানের জন্য আমাদের চিকিৎসা সহযোগিতায় আরও চীনা শহর এবং উচ্চ স্তরের হাসপাতাল যুক্ত করবে।
তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর গভীর গবেষণা আরও জোরদার করতে, জনমতের প্রবণতা সঠিকভাবে ধারণ করতে, ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বন্ধুত্বপূর্ণ বক্তব্য জোরদার করতে এবং চীনা ও বাংলাদেশী জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য একটি দৃঢ ভিত্তি তৈরি করতে উভয় দেশের প-িতদের স্বাগত জানাই।

বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত ইয়াও টানা তিন বছর ধরে বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি নিয়ে জরিপ সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিভিন্ন চার্ট এবং মডেলের মাধ্যমে, প্রতিবেদনটি চীনের প্রতি বাংলাদেশী জনগণের জ্ঞান এবং বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে, রাষ্ট্রদূত বলেন। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।  যে ক্ষেত্রগুলির জন্য মূল্যবান পরামর্শও প্রদান করে যেগুলিকে আরও উন্নত করার প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে প্রতিফলিত চীনের প্রতি জনমত সম্পর্কে তার তিনটি চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন যে আমাদের দুই জনগণের মধ্যে সম্পর্কের অটল ভিত্তিকে সমুন্নত রাখা দরকার, যা প্রতিদিনই আরও উন্নত হচ্ছে।  তিনি বলেন, সাক্ষাৎকার নেওয়া ৯৯% মানুষ চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অনুমোদন এবং সমর্থন করে, যা ঐকমত্যের বিস্তৃতি প্রদর্শন করে।

২০২২ সালে প্রায় ৬০.১% বাংলাদেশী মানুষ চীন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেছিল, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৬৬.৭% হয়েছে। ২০২২ সালে প্রায় ৫০% বাংলাদেশী মানুষ চীনের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ৮৫% হয়েছে। বাংলাদেশী জনগণ বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানায় এবং বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন, নির্মাণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উচ্চারণ করে।

×