ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী

এলডিসি থেকে উত্তরণ পুনর্বিবেচনায় কমিটি গঠন হয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৪, ১২ মার্চ ২০২৫

এলডিসি থেকে উত্তরণ পুনর্বিবেচনায় কমিটি গঠন হয়েছে

আনিসুজ্জামান চৌধুরী

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি হয়েছে।’ এ সময় তিনি জানান, অনেকেই পাচারের টাকা ফেরত দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। 
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই বিশেষ সহকারী বলেন, এলডিসি উত্তর পেছানোর ব্যাপারে আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারি। আবেদনের সঙ্গে যথাযথ কারণ ও কী করব, সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। একটা বিশ্বসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা সেদিকেই যাব। তবে আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে। সেটার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এই দায়িত্ব পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমি হয়তো কিছু করতে পারব। বাংলাদেশে এখন সংকটময় সময় চলছে। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে গাজার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। সব খাতেই দুর্নীতি হয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতি ও ভঙ্গুরতা আমরা এর আগে কোনো দেশে দেখিনি। আমাদের জিডিপির গ্রোথে প্রভাব না পড়লেও অন্যান্য খাতে ভঙ্গুরতা আছে। এখানে লুকোচুরি কোনো বিষয় নেই।
দেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আপনারা কী কাজ করছেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একটা বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাই, সেটা হলো ভুয়া ডাটা বা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করতে চাচ্ছি, সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা বেড়ে গেছে। এটা হয়ছে ২০১০ সাল থেকে। একই সঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ রিসোর্সগুলো ভঙ্গুর হয়ে গেছে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের যে পরবর্তী বাজেট আসবে, তার রিসোর্স কোথায়? আমাকে যদি আরও ঋণ নিতে হয়, তা হলে আরও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। এই রিসোর্স মোবিলাইজ করা খুব সহজ নয়। তবে আমাদের উন্নতির মধ্যে শুধু আমাদের প্রত্যেকের আয় বেড়েছে।

আমরা মধ্যম আয়ে চলে গেছি। সে অনুযায়ী আমাদের রাজস্ব বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু সেগুলো গেল কোথায়? তাই মানুষকে ট্যাক্স দিতে উৎসাহী করতে হবে। আমি ট্যাক্স দেব না অথচ আশা করব সরকার আমাকে সেবা দেবে!
এলডিসির জন্য যে সূচকগুলো ছিল সেগুলোর কি সবই ভুয়া ছিলÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনে করুন সব সঠিক, কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি কী? আমরা যে বাজার সুবিধাটা পাই, সেটার ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে। এখানে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। ২০১৮ সাল থেকে বলছি, আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসব। আজকে ২০২৫ সাল, এই ৭ বছরে আমাদের একটা খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমল না কেন?
তা হলে এলডিসি থেকে উত্তরণ স্থগিত বা পুনর্মূল্যায়ন চাচ্ছেন কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, আমরা এখনো সেই সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে ব্যবসায়ী ও তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সঙ্গে বসতে হবে। আমাদের পুনর্বিবেচনার জন্য কমিটি হয়েছে, দ্রুতই একটা সিদ্ধান্তে আসব। তবে এখনই এটা বলতে পারব না।
বাংলাদেশ চাইলেই কি এলডিসি থেকে উত্তরণ স্থগিত করতে পারবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের হাতে পুরোপুরি না, তবে আমাদের অধিকার আছে, আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারি। আবেদনের সঙ্গে যথাযথ কারণ ও কী করব, সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। একটা বিশ্বসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা সেদিকেই যাব। তবে আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে। সেটার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
অনেক দিন ধরে দেখছি, বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই এবং অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছেÑ এমন প্রসঙ্গ তোলা হলে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর। গাজার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ থেকে বুঝে নেবেন আপনার দেশের অবস্থা কেমন। এই মুহূর্তে কি গাজায় কেউ বিনিয়োগ করবে? একটা আরেকটার সঙ্গে যুক্ত।
পাচারের টাকা ফেরতের প্রস্তাব ॥ পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, অনেকেই পাচার হওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দিচ্ছেন।
পাচার হওয়ার টাকা ফেরত আনা সম্ভব কি নাÑ এমন প্রশ্নে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। যেসব স্থানে টাকা গেছে এতে সেসব দেশ উপকারভোগী। আন্তর্জাতিক আইন আছে যেহেতু তারা উপকারভোগী তাই সহজে তারা এটা ছাড়বে না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টাকে তারাই অফার করছেন এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য। আমরা দ্রুত কাজ করছি। আশা করছি সফল হবো।
কারা অফার করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা সম্ভব নয়। এগুলো বললে কাজে সমস্যা হবে। কিছু তো গোপনীয়তা মানতে হবে। যারা টাকা নিয়ে গেছেন তারা তো বসে নেই। এ জন্যই একটা গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে যতটুকু বলা সম্ভব সেটুকুই বলছি। এর বেশি বললে আমাদের কাজটা বন্ধ হয়ে যাবে।
এখানে আইনের ইস্যু আছে, প্রপার আইন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে মিল রেখে। আপনি ধরলেই তো টাকা ফেরত আনতে পারবেন না। এখানে কতগুলো মাধ্যম আছে। এসব বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাচ্ছি বিশ্বব্যাংকসহ অনেকেই কাজ করছে।

×