ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ১১ মার্চ ২০২৫

অগ্নিঝরা মার্চ

অগ্নিঝরা মার্চের আজ দ্বাদশ দিন

অগ্নিঝরা মার্চের আজ দ্বাদশ দিন। ১৯৭১ সালের এইদিনে প্রতিবাদ প্রতিরোধ বিদ্রোহ বিক্ষোভে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেছিল সে সময়টায়। শিকল ছেঁড়ার অদম্য আকাক্সক্ষায় দুরন্ত দুর্বার হয়ে উঠছিল বীর বাঙালি জাতি।  একাত্তরের এদিন চির পরিচিত শাপলাকে আমাদের জাতীয় ফুল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিল্পী কামরুল হাসানের আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত শিল্পীদের এক সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণা শেষে মুক্তিকামী মানুষকে সেদিন আরও বেশি উৎসাহী করে তুলতে তারা প্রতিবাদী পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন বিলি করেন। 
একাত্তরের ১১ মার্চ জাতিসংঘের তদানীন্তন মহাসচিব উ থান্ট এক নির্দেশে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত জাতিসংঘের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন সদর দপ্তরে ফিরে যান। এ নির্দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ক্ষুব্ধ  শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষও এ পৃথিবীর বাসিন্দা। তাদের প্রতিও জাতিসংঘের দায়িত্ব রয়েছে। 
একাত্তরের এদিনে জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহির উদ্দিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব বর্জন করেন। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় আগামী ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা আজ অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। 
ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে  শেখ মুজিবের নেতৃত্বের প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনই জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।’ 
মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানি প্রগতিশীল নেতাদের উদ্দেশে জনসভায় বলেন, ‘আল্লাহ’র ওয়াস্তে আপনারা বাঙালিদের বিষয়ে নাক গলাবেন না।’ লাহোরে স্থানীয় বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিকসহ ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা এক যুক্ত বিবৃতিতে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। 
রেডিও পাকিস্তান করাচি কেন্দ্রের খ্যাতনামা বাংলা খবর পাঠক সরকার কবীর উদ্দিন বেতারে বাঙালির আন্দোলনের খবর প্রচারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রতিবাদে রেডিও পাকিস্তান বর্জন করেন। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক বিবৃতিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম বানচাল প্রয়াসী বৃহৎ ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়। 
অপর এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য কোনো জ্বালানি সরবরাহ না করতে সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীদের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, গণদুশমনদের কোনোভাবে সাহায্য করা হলে তেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
মুক্তিপাগল বাঙালির এমন অদম্য অগ্রগতিতে ক্রমেই স্তিমিত হতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর কর্মকা-। লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের ফলেই পূর্ববাংলায় থাকা পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা দমে যেতে থাকে। মার্চের শুরুতে পতাকা উত্তোলন এবং ইশতেহার পাঠের পর থেকে বাঙালির স্বাধীনতা প্রাপ্তির আকাক্সক্ষা আরও তীব্র হতে থাকে। পেশাজীবীরা পথে নেমে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি শাসন ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া পুরো বাংলাদেশের সব পরিচালিত হচ্ছে এক ব্যক্তির অঙ্গুলি হেলনে।

×