ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

বায়রাসহ এজেন্সিগুলো বিপাকে

সৌদিতে লোক পাঠাতে ভিসা জটিলতা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ১১ মার্চ ২০২৫

সৌদিতে লোক পাঠাতে ভিসা জটিলতা

দীর্ঘদিন সৌদি আরবের  শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় উভয় দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা চালু হয়েছে

দীর্ঘদিন সৌদি আরবের  শ্রমবাজার বন্ধ থাকার পর বর্তমানে উভয় দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা চালু হয়েছে। তবে শ্রমবাজার চালু হলেও বাংলাদেশ সরকারের ভিসা ব্যবস্থায় কিছু নতুন নিয়ম যুক্ত হওয়ায় সৌদিতে লোক পাঠানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে শ্রমবাজার ব্যবস্থায় লোক পাঠানো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমবাজার নিয়ে কাজ  করা এজেন্সিগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১ থেকে ২৪ জন পর্যন্ত ভিসাকে একক ভিসা এবং ২৫ থেকে শুরু করে পরিমাণ যতবাড়ে সে ভিসাকে গ্রুপ ভিসা ধরে কাজ করছে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। সেখানে কর্মীদের গ্রুপ ভিসার ছাড়পত্র বিএমইটি থেকে দেওয়া হলেও একক ভিসার কোনো ছাড়পত্রের প্রয়োজন হতো না বলেই জনকণ্ঠকে জানান বিএমইটি কর্তৃপক্ষ।

তবে গত ১৯  ফেব্রুয়ারি এক পরিপত্র জারির মাধ্যমে জানায় যে একক ভিসার ক্ষেত্রেও দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়া ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে জানায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ পরিপত্র জারি করার মাধ্যমে বায়রাসহ বিভিন্ন এজেন্সি বিপাকে পড়ে।
রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসায়ীদের ভাষ্য মতে, একজন কর্মীর  বেশি দুই বা পাঁচজন কর্মীর ভিসার জন্য সত্যায়ন করা  সৌদি আরবে অসম্ভব। কারণ বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী একক ভিসায়  সৌদি আরব গিয়ে থাকেন। এত কর্মীর জন্য সত্যায়ন করার সক্ষমতা আমাদের দূতাবাসের  নেই। আর  সৌদি আরবের মালিকরা সব শহর  থেকে  দূরে অবস্থান করায় সেখান  থেকে দূতাবাসে এসে সত্যায়ন অধিকাংশের ক্ষেত্রে সম্ভবপর হয়ে উঠবে না।
তবে মন্ত্রণালয় বলছে, একক ভিসায় কাজ করতে যাওয়া বেশির ভাগ কর্মী বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। বিএমইটির ছাড়পত্র  পেলেও তারা কাক্সিক্ষত কাজ করতে পারেন না।  সত্যায়ন হলে দূতাবাস  থেকে তারা এই নিশ্চয়তা পাবেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গাজী শাহেদ আনোয়ার স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক অভিবাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭-এর সংশোধিত বিধি ও এর দফা (১), (২) ও (১৮) অনুযায়ী  সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে চাহিদাপত্র যাচাই ও সত্যায়নের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী একজন কর্মী  থেকে ২৪ জন কর্মীর সত্যায়নের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা ই-ডিমান্ড সিস্টেমে  রেজিস্ট্রেশন করবেন। রেজিস্ট্রেশনে নিয়োগকর্তা কর্মীর নাম ও পাসপোর্ট নম্বরসহ অনলাইনে ডিমান্ড সাবমিট করবেন। ই-ডিমান্ড সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তুত নিয়োগ চুক্তি ডাউনলোড করে  প্রিন্ট নিয়ে নিয়োগকর্তার স্বাক্ষরসহ  সৌদি  চেম্বার অব কমার্স  থেকে সত্যায়নপূর্বক সিস্টেমে আপলোড করবেন। বাংলাদেশ দূতাবাস নিয়োগ চুক্তি সাবমিট হওয়ার পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবে।
পরিপত্র জারির পর একাধিকবার বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রিক্রুটিং এজেন্সিদের সংগঠন বায়রা। গত ২৩  ফেব্রুয়ারি বায়রার সাবেক নেতাদের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল  প্রবাসী কল্যাণ ও  বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব সারওয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে সৌদি গমনেচ্ছুক কর্মীদের বহির্গমনের নতুন শর্তারোপের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে করেন এবং সে নিয়ম দ্রুত প্রত্যাহার করার দাবি জানান। বৈঠকে বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুলই ইসলামসহ আরও তিনজন সাবেক নেতা উপস্তিত ছিলেন। সমাধান না আসায় গত ৫ মার্চ আবার একই দাবিতে বিএমইটিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বায়রা।
বৈঠক  শেষে বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব  ফখরুল ইসলাম বলেন, ২৮ তারিখ পর্যন্ত যেসব কর্মীর ভিসা এসেছে  সেসব কর্মীর আগের নিয়মে সত্যায়ন ছাড়া বিএমইটির ছাড়পত্র  দেওয়া হবে বলে বিএমইটির পক্ষ  থেকে আশ্বাস  দেওয়া হয়েছে। আর ২৮  ফেব্রুয়ারির পরে  যেসব কর্মীর ভিসা আসছে এবং সামনেও আসবে,  সেসব কর্মীর বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানো হবে বলে জনকণ্ঠকে জানান তিনি। এই আশ্বাসে আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করছি। তবে আমাদের দাবি দ্রুত পূরণ না করলে আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।
এ বিষয়ে বায়রার সাবেক যুগ্মমহাসচিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেহেতু বর্তমান সময় বাদে  সৌদি আরব ছাড়া অন্যান্য শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ সেহেতু  সেখানে অর্থাৎ সৌদিতে আগের নিয়মেই কর্মী পাঠানোর জোর সুপারিশ করছি।

যদি কর্মীর নিরাপত্তার স্বার্থে মালিকপক্ষের  কোনো তথ্য-প্রমাণের প্রয়োজন হয় তবে সেটি বিভিন্ন এজেন্সি মালিকপক্ষ থেকে ডেটা সংগ্রহ করে বিএমইটিতে জমা দেওয়ার পক্ষে, সেখানে দূতাবাসকে যুক্ত করা ঠিক হবে না। কারণ, এই প্রক্রিয়ায় সৌদি শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কর্মীর চাহিদা আসা কমে আসার সম্ভবনা রয়েছে। তাছাড়া  কর্মী পাঠাতে দীর্ঘমেয়াদি সময়  লেগে যাবে।
তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গাজী  মো. শাহেদ আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা এই  সেক্টরের সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তখন সবাই একমতো হয়েছিল এখন তারাই আবার ভিন্নমত পোষণ করছেন।  
উপসচিব আরও বলেন, ‘এমনিতেই একটা ঘটনা ঘটলে সেটা ভালো না মন্দ, তা না বুঝে বাতিল করার  চিন্তা আমাদের মাথায় চলে আসে। উনারা মনে করছেন এটি ভালো হবে না। কিন্তু আমরা মনে করছি দীর্ঘ মেয়াদিতে এটি ভালো হবে। তবে  যেকোনো জিনিসই পরিবর্তনশীল।’

×