ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বিপজ্জনক

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ১১ মার্চ ২০২৫

আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বিপজ্জনক

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এবং মানুষের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে গিয়ে ন্যায়বিচার ব্যাহত হলে নিরপরাধ মানুষও হয়রানির শিকার হতে পারেন। ফলে, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

ধর্ষণ মামলায় বিচার দ্রুত করার উদ্যোগ

সম্প্রতি মাগুরায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় সাধারণ জনগণ ও নারী সমাজ ক্ষোভে ফুঁসছে। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে প্রতিদিন গড়ে ১২টি ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে ভয়ংকর বলে আখ্যায়িত করেছেন সচেতন মহল।

সরকারের আইন উপদেষ্টারা ধর্ষণের মামলায় ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত এবং ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে আইনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করে শুধুমাত্র দ্রুত বিচার ব্যবস্থা চালু করলে নিরপরাধ ব্যক্তিরাও হয়রানির শিকার হতে পারেন। তাদের মতে, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়াকে কার্যকর করতে হলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ধর্ষণের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। অপরাধীরা যদি মনে করে যে তারা শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারবে, তবে অপরাধের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পুলিশের কার্যক্রম আরও দক্ষ ও আধুনিক করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

অনেকেই মনে করেন, অপরাধ দমনে শুধু কঠোর শাস্তি যথেষ্ট নয়, বরং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিএনএ পরীক্ষাসহ অন্যান্য ফরেনসিক পরীক্ষার সুবিধা দেশের সব জেলায় চালু করা হলে তদন্তের গতি বাড়বে এবং নির্ভুল বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার তাগিদ

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপরাধ দমনের জন্য কেবল শাস্তির কঠোরতা বাড়ানো যথেষ্ট নয়। দ্রুত বিচার করতে হলে তদন্তের মানোন্নয়ন করা প্রয়োজন, যাতে নিরপরাধ ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার না হন। অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হলে তদন্তের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু দ্রুত বিচার নয়, বরং অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি। আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি না ঘটলে এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে না আনলে অপরাধের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। তাই, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য একটি সুসংগঠিত ও আধুনিক আইন প্রয়োগ ব্যবস্থার প্রয়োজন।

রাজু

×