ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ আইন

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ১০ মার্চ ২০২৫

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ আইন

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই একটি বিশেষ আইন

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই একটি বিশেষ আইন করার তথ্য দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, পাচারের অর্থ ফেরানোর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে নতুন আইন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আপনারা জানেন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্রণীত শ্বেতপত্রের ফাইন্ডিংস ছিল ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। এরমধ্যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হয় বাংলাদেশের ‘ব্যাংকিং সিস্টেম’ থেকে। এ টাকা উদ্ধারে প্রথম থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়াস ছিল। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম থেকেই বলে আসছেন এটা হচ্ছে আমাদের সরকারের টপ প্রায়োরিটি।

এটা দেশের মানুষের টাকা। আমরা যেভাবেই হোক, টাকাটা ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছি। পাচার করা টাকা কীভাবে আনা যায়, সেটি ত্বরান্বিত করার জন্য একটা বিশেষ আইন খুব শীঘ্রই করা হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আপনারা এই আইনটা দেখবেন।
শফিকুল আলম বলেন, পাচারের অর্থ ফেরাতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স হয়। নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। টাস্কফোর্সের অন্য যারা আছে, তারা কতটুকু কী করছে টাকাটা ফেরত আনার জন্য, সে বিষয়ে একটা বড় মিটিং হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেড় ঘণ্টার ওই সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে শফিকুল বলেন, ‘প্রথম ডিসিশনটা হলো, একটা বিশেষ আইন হবে। এজন্য বেশ কয়েকটি আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টাস্কফোর্স কথা বলছে। আপনারা হয়ত আগামী সপ্তাহের মধ্যে আইনটা দেখবেন। অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ আইন পাস করা হবে।’ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুততম সময়ে টাকা ফেরত আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে সভায় নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, অনেক ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়তে যায়। এক কেসে দেখা গেছে, ছেলের একটি সেমিস্টারের টিউশন ফি হিসেবে ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাঠানো হয়েছে। মানি লন্ডারিংটা কীভাবে হয়েছে দেখুন। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা ব্যক্তির নাম প্রকাশ করছি না। কতটা ইনোভেটিভ প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয়েছে। আমরা জানতাম ওভার ইনভয়েসিং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে, ব্যাংকিং সিস্টেমে বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা চলে গেছে। কিন্তু দেখা গেছে কিছু কিছু জায়গায় লুপ হোল খুঁজে ৪০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। পৃথিবীতে কারও টিউশন ফি ৪০০-৫০০ কোটি টাকা কি আছে?
প্রেস সচিব বলেন, প্রচুর ল’ ফার্মের সঙ্গে সরকার ও টাস্কফোর্স কথা বলছে। ল’ ফার্মের সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্ট করতে এ আইনটা সাহায্য করবে। ২০০টি ল’ ফার্মের সঙ্গে আমরা অলরেডি কথা বলেছি। তবে এখনও সিলেকশন হয়নি। একটা আইনি প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে সিলেকশন হবে। ৩০টির মতো ল’ ফার্মের সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্টে যাবো। সেটি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এগুলো বাংলাদেশের মানুষের টাকা। যত দ্রুত টাকা ফেরত আনা যায়, এটার বিষয়ে প্রতি মাসে হাই পাওয়ার মিটিং হবে। ঈদের পর আরেকটা মিটিং তিনি ডেকেছেন। এখন থেকে এ বিষয়ে প্রতি মাসে মিটিং হবে। যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, সেটা কতটুকু হয়েছে? আমরা যতটুকু জেনেছি, এটা আরও বিস্তারিত জানার জন্য প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন।
ধর্ষণের শিকার শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে ॥ ব্রিফিংকালে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আব্দুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে। তার অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। 
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ শিশুটির বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। আজও তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শিশুটির শারীরিক অবস্থার খুব সামান্য উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে।

তবে শ্বাসরোধের কারণে তার মস্তিকে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘিœত হয়েছিল। মস্তিষ্কে পানি জমে গিয়েছিল, যেটা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তার বুকের মধ্যে যে বাতাস জমে ছিল সেটা দূর করা গেছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী দুই এক দিনের মধ্যে শিশুটির অবস্থার আরও উন্নতি হবে।

×