ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

টিউশন ফি’র নামে এক সেমিস্টারে পাচার করা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা:শফিকুল আলম

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ১০ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৯:৫৩, ১০ মার্চ ২০২৫

টিউশন ফি’র নামে এক সেমিস্টারে পাচার করা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা:শফিকুল আলম

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বিদেশে পাঠানো টিউশন ফি'র আড়ালে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে এই ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যানের তথ্যমতে, ধনী পরিবার থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান। তবে, একটি কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, একজন অভিভাবক তার সন্তানের নামে ৪০০ কোটির বেশি টাকা পাঠিয়েছেন, যা টিউশন ফি'র অজুহাতে মানি লন্ডারিংয়ের নজির।

 

তিনি আরও বলেন, সাধারণত আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়েও বাৎসরিক টিউশন ফি এক কোটি টাকার বেশি হয় না। অথচ, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, চার-পাঁচ কোটি টাকা এককালীন পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে, এবং এরই মধ্যে ১১টি কোম্পানি ও ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্তের আওতায় আনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামও রয়েছে। তাদের সম্পদের অবস্থান ও পাচারকৃত অর্থের গতিপথ চিহ্নিত করতে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা কাজ করছে।

 

বিএফআইইউ ও যৌথ তদন্ত দলের মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে দুদকে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ৫.১৫ কোটি টাকা সম্বলিত ১১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১২৪টি ব্যাংক একাউন্ট ও ৬৩৫.১৪ কোটি টাকার সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে।

 

এছাড়াও, রাজউকের ৬০ কাঠার প্লট, ১০টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, এবং মালয়েশিয়ার এক ব্যাংকে রাশিয়ান স্লাশ ফান্ডের অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৬টি মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে, এবং পরিবারের সাত সদস্যের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

 

তদন্তকারীরা বিভিন্ন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এখন পর্যন্ত ১৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে, যার মোট মূল্য ৮৭২.২৪ কোটি টাকা। একই সঙ্গে, ১৮১৭.৭৩ কোটি টাকার দেশীয় সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এবং ১৯.৬৮ হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, ১২৪.৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ৩.৭৯ মিলিয়ন পাউন্ড, ও ১১.৭৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

 

বৈদেশিক মুদ্রা পাচার রোধে সরকার ও বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা ব্যাপক পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই তদন্তের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে দেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও বৈধ লেনদেনের ভবিষ্যৎ। আগামী দিনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা এই অর্থ পাচার চক্রের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনতে সহায়ক হবে।


সূত্র:https://tinyurl.com/2t6pnz3n

আফরোজা

×