ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার নিয়ে সেবা বন্ধের হুমকি চিকিৎসকদের

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ১০ মার্চ ২০২৫

‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার নিয়ে সেবা বন্ধের হুমকি চিকিৎসকদের

ছবি সংগৃহীত

আগামী  ১২ মার্চের মধ্যে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার সংক্রান্ত রিটের নিষ্পত্তির মাধ্যমে ন্যায় বিচার না পেলে সব হাসপাতালে বহির্বিভাগের চিকিৎসা প্রদান বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

তারা বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রির বাইরে কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারেন না। সেখানে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। এমনকি অবৈধ এই বিষয়টি নিয়ে আদালতে বছরের পর বছর রিট ঝুলে রয়েছে।

রবিবার রাজধানীর বাংলামোটরে রুপায়ন টাওয়ারে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় চিকিৎসকেরা এই হুঁশিয়ারি দেন।

চিকিৎসকরা বলেন, চিকিৎসক না হয়েও নামের আগে চিকিৎসক লিখতে চাওয়া বড় ধরনের অন্যায়। এটি যদি রায়ের মাধ্যমে বৈধতা পেয়ে যায়, তা হবে চিকিৎসক সমাজ ও দেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য চরম হুমকি। আগামী ১২ মার্চের মধ্যে এ সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী সকল রিট নিষ্পত্তি করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বিশ্বের কোথাও নেই এমন ‘ডিপ্লোমা চিকিৎসক’ নামে বিভ্রান্তিকর কোনো পদবির প্রচলন করা যাবে না।

এনডিএফ’র অফিস সেক্রেটারি ডা. এ কে এম জিয়াউল হকের উপস্থাপনা ও জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় ‘স্বাস্থ্য খাতের চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক’ এই সভায় সভাপতিত্ব করেন এনডিএফ’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডাক্তার সাজেদ আব্দুল খালেক, ভাইস প্রেসিডেন্ট ঢাকা বিভাগ উত্তর এবং বিএসএমএমইউ শাখার সভাপতি ডা. আতিয়ার রহমান, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি ডা. নাজমুল আরেফিন।

এসময় অন্যান্য মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড মেডিকেল অর্গানাইজেশন অফ বাংলাদেশের (ইউমব) প্রধান সমন্বয়ক ডা. মোবারক হোসেন, ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’র সভাপতি ডা. জাবির হোসেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. রিফাত মাহবুব, বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটির প্রতিনিধি ডা. আসাদুজ্জামান এবং ডা. সম্রাট আকবর, রংপুর মেডিকেল কলেজ ইন্টার ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ ফরেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. শাহরিমা রিতু এবং সেক্রেটারি হেমায়েত উল্লাহ।

ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়তে হচ্ছে। এখন ডাক্তার পদবি কারা ব্যবহার করবে সেটাও নিয়েও রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কোনো ডিগ্রি না করেও অবৈধভাবে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এবং সেটি ১২ বছর ধরে আদালতে ঝুলে আছে। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। অথচ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্স আর ডাক্তার এক জিনিস নয়। বিশ্বের কোথাও এমনটা পাওয়া যায়না। ১০ বছর ধরে ম্যাটসের শিক্ষার্থীদের নিয়োগ বন্ধ। কিন্তু ঠিকই তাদের ভর্তি করা হয়েছে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক কারণে।

তিনি বলেন, আগামী ১২ মার্চের মধ্যে আমরা রিটের নিষ্পত্তি এবং ন্যায় বিচার চাই। ইতোমধ্যে আমরা ড্যাবসহ অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসেছি। দাবি বাস্তবায়ন না হলে সারাদেশের হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ইউমব-এর প্রধান সমন্বয়ক ডা. মোবারক হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের কথা বলে আসছি। প্রায় ১২ বছর ধরে ডাক্তারি পদ ব্যবহারের রিট ঝুলে আছে। তাহলে বিএমডিসি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর কী করছে? এর পেছনে তৎকালীন চিকিৎসক নেতারাও দায়ী। এখন দুদিন পর পর ডিপ্লোমাধারীদের ডাক্তারি পদ ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে। এটি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আমলাদের ষড়যন্ত্র।

এনডিএফ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এনডিএফের মতো চিকিৎসকদের পেশাদার সংগঠনগুলো আমাদের অভিভাবক। আমাদের কথাগুলো আপনারা রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরুন। যে কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করব, তাতে আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। বিশেষ করে আদালতে ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে, মন্ত্রণালয়ের বিষয়গুলো তুলে ধরা এবং ম্যাটসের কারিকুলাম স্টান্ডার্ড পর্যায়ে নিতে এনডিএফের জোরালো ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা রাখি।

এনডিএফ জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের পর চিকিৎসকদের যত যৌক্তিক দাবি ছিল, সবগুলোর পাশে থেকেছে এনডিএফ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে একাধিক সংবাদ সম্মেলন ও কনফারেন্স করা হয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রতিটি জায়গায় আমরা কথা বলেছি। বর্তমানে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করা নিয়ে দেশব্যাপী সোচ্চার চিকিৎসকেরা। এবারও আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। কিভাবে পাঁচ দফা বাস্তবায়ন করা যায়, সে ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কথা বলা হবে। সরকারকেই এগুলো সমাধান করতে হবে।

আশিক

×