ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

ভাগ্নেকে চাকরি দিতে চুরির অপবাদ দিয়ে সহকর্মীকে চাকরিচ্যুত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ১০ মার্চ ২০২৫

ভাগ্নেকে চাকরি দিতে চুরির অপবাদ দিয়ে সহকর্মীকে চাকরিচ্যুত

ছ‌বি: সংগৃহীত

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কপিরাইট অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হককে নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সভাপতি ছিলেন তিনি। চাকরিজীবনেও জড়িয়েছেন নানান বির্তকে। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজের ভাগ্নেকে একই অফিসে চাকরি দিয়েছেন।

অভিযোগ আছে, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ফজলুল হক (মাস্টররোলে কর্মরত) তার অধীনে অনেককে চাকরি থেকে বিদায় করে দিয়েছেন। তাছাড়া এমন অভিযোগও রয়েছে যে, একজনের নামে থাকা কপিরাইটের স্বত্ত্ব অন্যের নামে করে দিয়েছেন। অভিযুক্ত ফজলুল হক সবই করেছেন অর্থ আর পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে।

তাছাড়া শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত কবিতা-গল্প লিখিছেন ফজলুল হক। তিন মাস পরপর একবার টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর মাজারে যেতেন অনুসারীদের নিয়ে। আবার আওয়ামী লীগের দলীয় সব কর্মসূচিতেও প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতেন; যা সরকারি চাকরিবিধির লঙ্ঘন। তার অনিয়ম, দুর্নীতিতে কেউ বাধা হলে তার ওপর চলতো ষড়যন্ত্রের খড়গ।

তবে ফজলুল হক এখন ভোলপাল্টে ফেলেছেন। বিএনপির একজন নেতার অফিসে প্রতিনিয়ত হাজিরা দিচ্ছেন। কারণ তিনি এখন হতে চান কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার। তবে তার অনিয়মের বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে গায়ক এসডি রুবেলসহ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ দিয়েছেন।

গত বছরের মার্চে লিফটম্যান হিসেবে মাস্টাররোলে চাকরি পান ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের যুবক ওয়াসিম মিয়া। একমাস না যেতেই এক নোটিশে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অভিযোগ আনা হয়, অফিসের মূল্যবান জিনিস চুরির।

ওয়াসিম মিয়া এই প্রতিবেদকে বলেন, ‘চাকরিতে যোগদানের একমাস পর এক নোটিশে আমার চাকরি চলে যায়। অভিযোগ করা হয়, আমি অফিস থেকে জিনিস চুরি করেছি। তবে অফিসে সবজায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। কিন্তু কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করে আমাকে চাকরি থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়। ডেপুটি রেজিস্ট্রারের পা পর্যন্ত ধরেছি। কিন্তু তিনি চাকরি ফেরত দেননি। আমাকে বিদায় করে সেখানে ফজলুল হকের দুঃসম্পর্কের ভাগ্নে জাহাঙ্গীরকে চাকরি দিয়েছে। তাকে চাকরিতে ঢোকাতেই আমাকে চুরির অভিযোগে বিদায় করা হয়।’

জানা গেছে, মোহাম্মদ ফজলুল হক বিসিএস ক্যাডারে ১৮ ব্যাচে পরিসংখ্যান ক্যাডারে যোগদান করেন। ছাত্রজীবনের রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে পরিসংখ্যান ক্যাডার পরিবর্তন করে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি নেন। উপসচিব হওয়ার পর তিনি রাজনীতির সাথে পুরো সক্রিয় হয়ে কাজ শুরু করেন। শেখ মুজিবুর ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি প্রতি তিন মাস পরপর শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে গিয়ে জিয়ারত করে আসতেন।

অভিযুক্ত ফজলুল হকের গ্রামের বাড়ি পাবনায় হওয়ার কারণে তিনি প্রতিনিয়ত ডেপুটি স্পিকার শামসুল ইসলাম টুকুর সাথে দেখা করতেন। এমনকি সরকার পতনের পরও তিনি তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার নিজের ফেসবুকে প্রতিনিয়ত শেখ মুজিবুর ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দিতেন। সরকার পতনের পর তার ফেসবুক আইডি থেকে দ্রুত বিগত সরকার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাসগুলো ডিলেট করে দেন।

হাসিনা সরকারের দুর্নীতিবাজ সাবেক সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমেদকে দিয়ে তদবির করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন ফজলুল হক। যোগদানের পর আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তার আয়ত্তে নিয়ে কপিরাইট অফিসে বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করেন তিনি। কপিরাইট অফিসের আয়-ব্যয় ক্ষমতা ফজলুল হক নিজের কাছে নেন। নিজের ইচ্ছেমতো কেনাকাটা শুরু করেন। পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ে তার নিজের লোক নিয়োগ দিয়েছেন।

এদিকে নিজের কপিরাইটের স্বত্ত্ব হারিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন শেখ দিদারুল হোসেন দিদার। বর্তমানে তিনি খুলনার ডুমিরিয়ার খণিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। একই অভিযোগ এনেছেন জনপ্রিয় গায়ক এসডি রুবেল।

গায়ক এসডি রুবেল বলেন, ‘‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’ চলচ্চিত্রের কপিরাইটের জন্য অনলাইনে আবেদন করি। পরে জি সিরিজের সঙ্গে কপিরাইট সঙ্গে ডিজিটাল রাইটের মালিকানার বিষয়ে শুনানি হয়। সেখানে ফজলুল হক পক্ষপাতমূলক কথা বলেন। এরপর কপিরাইট অফিসে ঘুরে ঘুরেও আমার সমাধান পাইনি। এমনকি আমার সঙ্গে খুবই বাজে আচরণ করা হয়, যা অপ্রত্যাশিত। আমি আমার চলচ্চিত্রের কপিরাইট স্বত্ত্ব এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খারাপ আচরণের বিহিত চাই।’

ফজলুল হকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিদুর রহমান বলেন, ‘কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা তার অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। আর ডেপুটি রেজিস্ট্রার যদি ফ্যাসিস্ট সরকারের লোক হয়ে কাজ করে, সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেখবে। তারাই সিদ্ধান্ত নিবেন তাকে বদলি করবে নাকি কী ধরনের ব্যবস্থা নিবে।’

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে কপিরাইট ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হককে একাধিকবার কল ও এসএমএস করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

রাকিব

×