
.
‘মাত্র ৮ বছরের শিশু রাফিয়া (ছদ্মনাম)। বড় বোনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়াই যেন কাল হলো। মাগুরায় নিজের বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তার বোনের শ্বশুর এবং স্বামীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পার করছে দিন।’
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে থাকে ধর্ষণের খবর। বিশেষ করে পরিবারের বায়োজ্যেষ্ঠদের দ্বারা কয়েকদিনের ব্যবধানে বেশ কয়েক শিশুর ধর্ষণের খবর সামনে এলে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে দেশের সাধারণ মানুষ। শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার দিনভর ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে উত্তাল ছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে নেমে ধর্ষকদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সবার একই দাবি- এসব বিকৃত রুচির মানুষদের এখনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা না হলে ভবিষ্যৎ পরিণতি খুব খারাপ হবে।
মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ধর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার মধ্যরাত থেকেই বিক্ষোভ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের মৃত্যুদ- কার্যকর ও বিগত বছরগুলোতে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিতেরও দাবি জানায়।
শনিবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। এর পর হল পাড়া থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল বের হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন। বিক্ষোভে স্লোগান ওঠে, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’।
শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে চান তারা। বিশেষ করে মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তারা।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় ধর্ষকদের প্রকাশ্য ফাঁসির দাবি জানিয়ে রোকেয়া হলের নারী শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করেন। মিছিলটি রোকেয়া হলের সামনে থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে আবার হলের সামনে ফিরে আসে। সেখানে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের প্রকাশ্য মৃত্যুদ- কার্যকর ও বিগত বছরগুলোয় যারা ধর্ষণের জড়িত ছিল তাদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান। রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের মিছিলে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্য রেপিস্ট’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। ধর্ষণের প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদও।
এ ছাড়া ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই’, ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’ এ রকম বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মা-বোনদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা বলে দিতে চাই, আপনারা যদি আমার বোনদের ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে এই দেশের শাসনভার চালানোর অধিকার আপনারা হারিয়ে ফেলেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মাগুরার সেই শিশুর সব ছবি ইন্টারনেট থেকে অপসারণের নির্দেশ ॥ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মাগুরার সেই শিশুটির সব ছবি, ভিডিও ও নাম-পরিচয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসি ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই শিশু ও তার ১৪ বছর বয়সী বড় বোনের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রবিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিট দায়ের করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
পরে সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানান, দুইজন সমাজসেবা কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় একজন শিশুটির দেখাশোনা করবেন। আরেকজন মাগুরাতে শিশুটির বোনকে দেখাশোনা করবেন। কারণ শিশুটির বিবাহিত বোনটিও শিশু। তার শ্বশুরবাড়ি হচ্ছে ঘটনাস্থল। সেখানেও সে নিরাপদ নয়। তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে এই দুই অফিসার কাজ করবেন। ১৭ তারিখের মধ্যে বিবাদীরা আদালতের আদেশের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেবেন। বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, আইনে আছে ১৮০ দিনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এ কারণে কোর্ট এটাকে বাইপাস করতে পারল না। তার জন্য ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারটা শেষ করার কথা বলেছেন।
হামিদুল মিসবাহ বলেন, বিটিআরসি ও সাইবার পুলিশকে বলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে সমস্ত কনটেন্ট (নাম, ছবি, পরিচয়) আছে সেগুলো রিমুভ করতে। কারণ আইনের ১৪ ধারায় নাম পরিচয় প্রকাশে বিধিনিষেধ আছে। এ ছাড়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ তদন্ত কমিটিকে একটা গাইডলাইন বানাতে বলেছেন। যাতে করে সারাদেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা দমনে ভিকটিমদের সাপোর্ট দেওয়া যায়।
তদন্তের বিষয়ে আইনের ১৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন কোনো অপরাধের তদন্ত- (ক) অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের সময়ে হাতেনাতে পুলিশ কর্তৃক ধৃত হলে বা অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধৃত হয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ হলে, তার ধৃত হওয়ার তারিখ হতে পরবর্তী পনেরো কার্য দিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে; অথবা (খ) অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের সময়ে হাতেনাতে ধৃত না হলে তাহার অপরাধ সংঘটন সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য প্রাপ্তি বা, ক্ষেত্রমত, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা তার নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা ট্রাইব্যুনালের নিকট হতে তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির তারিখ হতে পরবর্তী ষাট কার্য দিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
যৌন নিপীড়ন বন্ধে আলাদা হটলাইন চালু করা হবে ॥ রাস্তা-ঘাটে নারীদের যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ করতে দ্রুত আলাদা হটলাইন চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। রবিবার আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, নারীদের সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে যে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি করা হয় সে বিষয়ে প্রতিকার নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত আলাদা একটা হটলাইন দেওয়া হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা করা হবে। রাস্তা-ঘাটে যেকোনো ঘটনা ঘটলে সেই হটলাইনে অভিযোগ দেওয়া যাবে। এটা তদারকির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেডিকেটেড একটা সেল থাকবে। এ ছাড়া ধর্ষণ মামলা তদারকির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের একটা আলাদা সেল থাকবে। যাতে অযথা কালক্ষেপণ না করা হয়।
মাগুরার ঘটনায় কত দিনের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করবেন, ইতোমধ্যে একটা দাবি উঠেছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার করতে হবে প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব করব। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টা হলো, অনেক সময় দ্রুত বিচার করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে অবিচারও হতে পারে। এজন্য আমরা অর্ধেক সময় কমানোর লক্ষ্য রেখেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে মাগুরার বিষয়ে সবাই মিলে কাজ করলে তারও অনেক আগে কাজ শেষ করতে পারবো।
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর বোনের বুকফাটা আহাজারি ॥ ধর্ষণের শিকার হয়ে একদিকে শিশুটি যখন হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। অন্যদিকে তাকে রক্ষা করতে না পারায় বুকফাটা আহাজারি করছেন বড় বোন। মুঠোফোনে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমার স্বামী ও তার ভাই আগেও বিয়ে করেছিল। তাদের দুজনের স্ত্রী একসঙ্গে বাসা ছেড়ে চলে যায়। একজন না হয় যেতে পারে। কিন্তু দুজনেই কেন? নিশ্চয় আমার শ্বশুর তাদের সঙ্গে এমন কিছু করেছে। আমার শ্বশুর বিভন্ন সময় আমাকে জড়িয়ে ধরত। যখন স্বামীকে জানালাম, সে উল্টো আমাকে মারধর করল। মাকে জানালাম, মা বিশ্বাস করলেন কিন্তু সংসার ভাঙবে বলে আমাকে আবার সেই বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। যাদের কাছেই বলেছি কেউ বিশ্বাস করেনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলতে থাকলেন, হয়তো কোনো এক রাতে আমার কপালেও আমার বোনের মতোই এমন কিছু ঘটত। পুরো পরিবার আমার শ্বশুরের এই চরিত্রের কথা জানে, তবু সবাই মিলে ধামাচাপা দিতে সাহায্য করত। রাতে খাবার খেয়ে আমি, বোন ও আমার স্বামী ঘুমিয়ে পড়ি। আমার স্বামী নাকি দরজা খুলে দেয় এবং বাইরে তুলে নিয়ে এই কাজ ঘটেছে। ঘরের ভেতর ঘটলে তো আমি একটু হলেও টের পেতাম।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি আরও বলেন, আমার ছোট বোন বলেছে, আমার স্বামী ও শাশুড়ি দুজনেই দেখেছেন, আমার শ্বশুর কিভাবে আমার ছোট বোনের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে। কিন্তু তারা কিছুই বলেনি। আমি যখন আমার বোনকে পেলাম সে তখন ফ্লোরে পড়ে ছিল। আমাকে বলল, আপু, খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি ভাবলাম হয়তো ঠান্ডা লেগেছে, আমি বুঝতেই পারিনি ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে।
বোন যখন আমাকে জানালো আমার শ্বশুর তাকে ধর্ষণ করেছে। আমি আমার স্বামীকে বললাম। এ কথা শুনে আমার স্বামী রেগে গিয়ে আমাকে প্রচন্ড মারধর করল এবং দরজা বন্ধ করে দিল। পুরো পরিবার মিলে আমাকে হুমকি দিল, তোর বোনকে মেরে ফেলব। সকাবেলা দরজা খোলা হলে দেখি আমার ছোট বোনের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। গলায় আঘাতের চিহ্ন, ও ছটফট করছে। আমার শাশুড়ি মেয়ে মানুষ হয়েও আমাদের কষ্টটা বোঝেনি। সেও তাদের সহযোগিতা করেছে। আমি সবার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
সাম্প্রতিক সময়ে যত ধর্ষণকান্ড ॥ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে এক কলেজছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। মেয়েটি প্রেমিকের সঙ্গে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এলাকায় ঘুরতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় চার বখাটে তরুণ প্রেমিককে বেঁধে রেখে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে।
এর একদিন পরেই মুন্সীগঞ্জে এক শরবত বিক্রেতা দুই শিশুকে ধর্ষণ করেছে। যাদের বয়স মাত্র ৮ এবং ১০ বছর। আর সেই শবরত বিক্রেতা আলী চোকদারের বয়স প্রায় ৭০। কুমিল্লায় বাকপ্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছে দুই বৃদ্ধ। চিপসের লোভ দেখিয়ে একটা নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম এবং বাহার মিয়া মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এদের দুইজনের বয়স ৫৫ থেকে ৬০ বছর।
এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিকের বিরুদ্ধে। বন্ধের দিনে অতিরিক্ত ক্লাসের কথা বলে তাকে স্কুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে বাইকে করে মেয়েটির বাসার কাছে ফেলে রেখে যায়।
প্রতিবাদমুখর ক্যাম্পাস থেকে রাজপথ ॥ দেশব্যাপী নারীর ওপর সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি এবং বিচারহীনতার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। এদিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর ও সাভারে আরও ধর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতার।
কেরানীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ॥ ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে (২০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। তারা হলেন- আশরাফুল ইসলাম সিয়াম (২০) ও জিৎ সরকার (১৯)।
রবিবার বেলা ১১টার দিকে পরীক্ষার জন্য সেই নারীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার রাতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ পাঁচগাও ঋষিপাড়া নয়াবাড়ী এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ওই গৃহবধূর বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়। স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে লঞ্চে করে ঢাকা সদরঘাটে আসেন। সদরঘাট থেকে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া এলাকায় এলে রাত হয়ে যায়। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে দুই যুবকের সঙ্গে কথা হয়। তারা ওই গৃহবধূকে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আরও দুজন আগে থেকেই ছিল। পরে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়।
গাজীপুরে শিশু ধর্ষণ ও এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টা ॥ শ্রীপুরে নারী দিবসে এক শিশুকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ এবং এক কওমি মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টা এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার দুই শিশুর বয়স আট বছর। শনিবার রাতে শ্রীপুর থানায় ওই দুটি মামলা দায়ের করে ভিকটিমের স্বজনরা। শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন- ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের শামসুল হকের ছেলে আরমান মিয়া এবং নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার শিবপুর ( লেংগুরা) গ্রামের মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল মালেক।
সাভারে বিয়ের প্রলোভনে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ ॥ এক কলেজ ছাত্রীকে (১৭) জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে আয়াতুস সিয়াম (২৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আয়াতুস সিয়াম সাভার সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এবং পৌর এলাকার বিনোদবাইদ মহল্লার হামিদুল হক সুমনের ছেলে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালে সাভার সরকারি কলেজের বার্ষিক পিঠা উৎসবে সিয়ামের সঙ্গে ওই ছাত্রীর পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ের প্রলোভনে ওই কিশোরীকে সিয়াম তার বন্ধু সাফার সহায়তায় অপর বন্ধু হোসেন সাঈদীর বাসায় ডেকে নিয়ে যায় এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সেইসঙ্গে গোপনে মুঠোফোনে সেই ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখে। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রচারের ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে সিয়াম।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশিক ইকবাল জানান, অভিযুক্ত ওই যুবককে আদালতে এবং ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত ওই যুবকের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
মাগুরায় আদালতের ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ ॥ মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে রবিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শহরের চিফ জুডিসিয়াল ম্র্যাাজিস্ট্রেট আদালত ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এই সময় শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে সেøাগান দেয়। সরকারি কলেজ থেকে মিছিল সহকারে নানা স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদালতের গেটে অবস্থান নেয়। এই সময় আদালতের ভেতরে প্রবেশ এবং বের হওয়া বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায় এবং অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তকে গণধোলাই ॥ পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক স্কুল শিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিককে আদালতে তোলার সময় পুলিশের উপস্থিতিতেই গণধোলাই দিয়েছেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। রবিবার দুপুরে অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলাম এর আদালতে তোলার সময় এ ঘটনা ঘটে।
পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযুক্ত মানকিকে পুনরায় কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়। এর আগে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে ছাত্র-জনতার ব্যানারে ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তায় ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা জজ কোর্ট চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় ধর্ষকের ফাঁসির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় কয়েকশ’ ছাত্র-জনতাকে।
জাবিতে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ গঠন ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। রবিবার দিনভর এসব কর্মসূচি পালিত হয়। এ ছাড়া সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ ও নিপীড়নসহ সার্বিক বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নেতৃত্বে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ গঠন করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। রাত পৌনে দুইটার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। তাঁরা মিছিল নিয়ে কয়েকটি সড়ক হয়ে ছাত্রীদের হলের সামনের সড়ক দিয়ে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান। সেখানে রাত আড়াইটার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় আধাঘণ্টা বিক্ষোভ শেষে রাত তিনটার দিকে অবরোধ তুলে নেন তাঁরা।
এদিকে, একই দাবিতে রবিবার সকাল সাড়ে এগারোটায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ও চারুকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তারা ধর্ষণে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বিশেষত ধর্ষণের মতো ঘটনা বাড়ায় সরকার ও প্রশাসনের সমালোচনা করেন তারা। এ ছাড়া ধর্ষণের মতো ঘটনায় দ্রুত বিচারের দাবিও জানান বক্তারা।
অপরদিকে, সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ ও নিপীড়নসহ সার্বিক বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ নামে প্ল্যাটফর্ম ও কমিটি ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। বিশ^২ি০২১বদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়।
রাবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ ॥ সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটা ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
বেলা ১১টার দিকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্যারিস রোডে জড়ো হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পৌঁছে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
খুবিতে ধর্ষকের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ॥ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘঠিত ধর্ষণের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবিতে শনিবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা মিছিল করতে করতে হলের বাইরে বেরিয়ে আসেন।
এসময় তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ হল ও বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন হলের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হল প্রদক্ষিণ করে হাদি চত্বরে জড়ো হয় ।
ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড দাবিতে বেরোবিতে মানববন্ধন ॥ দেশে ধর্ষণসহ নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রবিবার বিকেল ৪টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্বরে জেন্ডার এন্ড ডেভলেপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধনে অংশ নেয়।
মানববন্ধনে দাবি জানানো হয়, ধর্ষককে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি মিডিয়া চত্ত্বর থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে এক নং ফটকের সামনে এসে শেষ হয়।
ধর্ষণ, হত্যা ও অরাজকতার প্রতিবাদে শাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ॥ ধর্ষণ, হত্যা, অরাজকতা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। মাগুরার ৮ বছরের শিশু আসিয়াসহ অসংখ্য ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনার জেরে বিক্ষোভ সমাবেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। শনিবার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ ॥ নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। রবিবার দুপুর ১২ টায় ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।
মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মহাসড়কে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে প্রায় আধঘণ্টা সমাবেশ করে কড়া স্লোগান দিয়ে সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী করে স্বরাষ্ট্র সচিবের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
মির্জাপুরে ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ॥ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আজগানা ইউনিয়নবাসী। রবিবার বেলা ১১টার দিকে হাটুভাঙ্গায় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
মেহেরপুরে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ॥ ধর্ষকের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ- কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ছাত্র-জনতা। রবিবার দুপুর ৩টার দিকে মেহেরপুর প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে ছাত্র জনতার সাথে একমত পোষণ করে অংশগ্রহণ করে বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ মেহেরপুর জেলা শাখার নেতা-কর্মীসহ ধর্ষকের বিচারের দাবিতে প্লাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে ধর্ষকের প্রতিকৃতি হিসেবে কুশপুত্তলিকা দাহ করে তারা। এ সময় ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে স্লোগানও দেয় অংশগ্রহণকারীরা।
নড়াইল যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে মিছিল ॥ দেশব্যাপী যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার অঙ্গিকার নিয়ে নড়াইলে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার দুপুর ৩ টায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) নড়াইল জেলা শাখার আয়োজনে পুরাতন বাসটার্মিনাল এলাকা থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নড়াইল প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয় এবং সেখানে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।