ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীর আমরণ অনশন

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৯ মার্চ ২০২৫

ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীর আমরণ অনশন

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাতিন আলমাস অপূর্ব ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন। আজ রোববার (৯ মার্চ) দুপুর ১টা ২৯ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে একাই অনশন শুরু করেন তিনি।


মিডিয়ার সামনে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন,“এর কি স্থায়ী কোন সমাধান আদৌ নেই?এই প্রেক্ষিতেই মূলত আমার তিন দফা দাবির ভিত্তিতে অনশনে আসা। যে তিন দফার মধ্যে প্রথম যে দফাটা, সেটা হলো—ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই কার্যকর করতে হবে।"


তিনি আরও বলেন,“আছিয়ার ক্ষেত্রে যে ঘটনাটি ঘটলো, সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিকৃত ঘটনা। পুরো একটি পরিবার ধর্ষণের সাথে জড়িত! শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর, জামাই—একটি পরিবারের প্রায় সবাই এই বর্বর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত! এটা বাংলাদেশের বুকে এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।"


"১৮ কোটি জনতার এই দেশে আছিয়াও তো আমাদের একজন। প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, বর্তমানে এক দেড় মাসের পরিসংখ্যান দেখলে বলা যায়—হারটা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে! প্রশাসন কি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে? সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী আসনে যারা বসে আছেন, তারা কি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন?”


প্রথম দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন,“আমি আমার সংসদ গ্রুপে একটি পোল দিয়েছিলাম, অনেক আলোচনার পর আমি এই তিনটি দাবি পেশ করছি। প্রথমত, ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে এবং ধর্ষণের অন্য কোনো শাস্তি গ্র্যান্টেড হবে না।"


তিনি কড়া ভাষায় বলেন,“এই প্রেক্ষিতে যদি কেউ মানবাধিকারের কথা তোলে, যদি বলে ‘ধর্ষকেরও মানবাধিকার আছে’, তাহলে আমি বলব—সে যেন আমার সাথে এসে কথা বলে! আমি তাকে বুঝিয়ে দেব, মানবাধিকারের প্রকৃত অর্থ কী! আপনি ধর্ষকের অধিকার দেখছেন, কিন্তু আমার ছোট্ট আট বছরের বোনটি, যে বিছানায় মৃত্যুর সাথে লড়ছে—তখন আপনাদের মানবাধিকারের কোনো প্রশ্ন ওঠে না?”


দ্বিতীয় দাবির বিষয়ে তিনি বলেন,“বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এটি একটি জাতীয় সংকট। তাই অবশ্যই স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অধীনে একটি পৃথক ট্রাইব্যুনাল বা বিশেষ সেকশন তৈরি করতে হবে, যার দায়িত্ব হবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান টিম গঠন করা। প্রয়োজনে, যদি ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। কালক্ষেপণ চলবে না!”


তিনি আরও বলেন,“এই দাবিটি কার্যকর না হলে, কোনোভাবেই ধর্ষণের প্রতিকার সম্ভব নয়! আমি এই বাংলার মাটিতে আর কোনো ধর্ষণের ঘটনা দেখতে চাই না! আমি এমন কোনো খবর শুনতে চাই না! এটা আমার শেষ কথা!"


তৃতীয় দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“যারা ধর্ষকদের মানবাধিকারের কথা বলে, তারা আসলে কার স্বার্থ রক্ষা করছে? আমার প্রশ্ন, যখন একটা আট বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, তখন মানবাধিকারের কথা কেন ওঠে না? যারা ধর্ষকের অধিকার দেখেন, তারা কি সেই শিশুর চোখের পানি দেখতে পান?”
“আমি অনশনে আছি, এটা আমার কোনো যন্ত্রণা নয়! আমি যুবক, আমার যথেষ্ট শক্তি আছে! কিন্তু আমার ছোট্ট বোন আছিয়া হাসপাতালের বেডে যে চরম যন্ত্রণা সহ্য করছে—আপনারা কি সেই যন্ত্রণাটা অনুভব করছেন?”

তিনি অনুরোধ, যারা সত্যিকার অর্থে ন্যায়বিচার চান, তারা আছিয়ার পাশে দাঁড়াতে।
 


সূত্র:https://tinyurl.com/5s9up3sz
 

আফরোজা

×