ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

ভারতীয় সেনাপ্রধানের বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ব্যথা কেন?

প্রকাশিত: ২২:১৫, ৯ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২২:২২, ৯ মার্চ ২০২৫

ভারতীয় সেনাপ্রধানের বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ব্যথা কেন?

ছবি : জনকণ্ঠ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপর যেন নেমে এসেছে শীতল কুয়াশার চাদর। অথচ ভেতরে জমছে অস্থিরতার ঢেউ। আর সেই অস্থিরতার ঢেউ থামানোর জন্য বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে দিল্লি।

ভারতের আশা, আসন্ন নির্বাচন বদলে দিতে পারে কূটনৈতিক সমীকরণ। ভারতের ধারণা, নতুন সরকার আসলেই মরিচা পড়া সম্পর্কের দা শাণিত হয়ে চকচক করবে। তবে মনে প্রশ্ন উঁকি দেয়, ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করছে কেন! তাদের মনে কি অন্য পরিকল্পনার প্যাচ?

বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের ফলে ভারতের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের পরিবর্তন আসতে পারে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রসঙ্গে দ্বিবেদী বলেন, ঢাকায় সরকার পরিবর্তন হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পরিবর্তিত হতে পারে। তাই এ বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুব দ্রুত হয়ে যায়।

ভারত যেন বাংলাদেশের নিয়ে বেশ তসবি জপছে। বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে ভারতের অবস্থান প্রকাশ্য। নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তারা আগ্রহের কথা জানাচ্ছে হরহামেশাই। 

৭ই মার্চ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালও বাংলাদেশের দ্রুত নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের প্রসঙ্গে তাদের আগ্রহের কথা জানান। বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নে ভারতের অতি আগ্রহ সন্দেহের চোখে দেখা দরকার। মাত্র এক বছর আগে যারা সক্রিয়ভাবে বিরোধিতা করে বাংলাদেশের সুষ্ঠ নির্বাচন বানচাল করেছে এবং আওয়ামী লীগকে ডামি নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করেছে, তাদের এই হঠাৎ নির্বাচন প্রীতি খুব সহজ ব্যাপার নয়।

অথচ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যে কয়েকটি দল প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা প্রায় সবাই ভারতের বিপক্ষে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ভারতের বিপক্ষে মন্তব্য করতেও দেখা গেছে দলগুলোর নেতাদের। স্পষ্টভাবে বলতে গেলে বিএনপি, জামায়াত এবং নতুন দল এনসিপি প্রকাশ্যে ভারতের বিরোধিতা করেছে।

বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমরা রক্ত দিয়ে এসে যে স্বাধীনতা কিনেছি, ওই স্বাধীনতা আবার বিক্রি করে দেবো! আমরা পিন্ডির কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, এটা দিল্লির কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করবো! এই রক্ত আমাদের মধ্যে নেই।”

এনসিপির নেতা সারজিস আলম বলেন, “ভারতকে একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক তখনই হবে, যখন ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হবে সমতার। যখন ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কিন্তু ওই বিগত ১৬ বছরে ভারত দেশের সাথে দলের যে সম্পর্ক করেছিল, ভারতের সাথে আওয়ামী লীগের যে সম্পর্ক করেছিল, সেই সম্পর্ক যদি আগামীতে তার স্বপ্ন দেখে, সেই স্বপ্ন বাংলাদেশে আর কোনদিন সফল হবে না।”

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এই তিনটি দলের সরকার গঠন করার সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে বলাই যায়, নতুন সরকার এলে ভারতের সাথে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে যতটুকু সম্পর্ক রাখা যায় সেটাই থাকবে। কারণ এর আগে পতিত আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ক্ষতি করে ভারতকে একতরফা ভাবে শুধু দিয়েই গেছে, যা আওয়ামী লীগের পতনের অন্যতম কারণ ছিল। সেই পথে অন্তত নতুন সরকার হাঁটবে না এটা এক প্রকার নিশ্চিত।

তাহলে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের এত তাড়া কেন, প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।

তবে নির্বাচনের ব্যাপারে দিল্লির অতি আগ্রহ উচ্ছিলা মাত্র। বিভিন্ন মাধ্যমে গুঞ্জন রয়েছে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে ভারত পশ্চিমা কোন কোন লবিকে কাজে লাগাচ্ছে। লীগকে রাজনীতিতে ফেরাতে দেশের প্রধান সারির রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে নিপথ্যে ভারতের হয়ে পশ্চিমা শক্তি মধ্যস্থতা করছে। চলছে দেন-দরবার, সুপারিশ।

বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারতের দ্রুত নির্বাচন করার তাগিদে নেপথ্যে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা এবং দ্রুত বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব বলয়ের দ্বারকে উন্মুক্ত করার বিষয় জড়িত থাকতে পারে। তবে একটা রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়েছে। এই ধরনের ষড়যন্ত্র হলে নিশ্চয়ই বাংলার জনগণ সেটা রুখে দিতে প্রস্তুত থাকবে। বাংলার জনগণ আর বাংলাদেশে বারবার গণহত্যা, গণতন্ত্র হরণ, ফ্যাসিজম ও স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করতে দেবে না। 

মো. মহিউদ্দিন

×