
ছবি: সংগৃহীত।
মসজিদের মাইকে তখন মাগরিবের আজানের ধ্বনি। ঢাকার ব্যস্ততম কারওয়ান বাজার মোড়ে তখনও রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন ট্রাফিক কনস্টেবল শাখাওয়ার। এক হাতে ইফতারের বাক্স, আরেক হাতে ব্যস্ত শহরের ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব।
"গরিব রাইখা ইফতার করতে তাতে কষ্ট নাই। যেহেতু আমরা জনগণের সেবক, জনগণের সেবা দেওয়াটাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। কষ্ট হলেও আমাদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করে," বলেন শাখাওয়ার।
শাখাওয়াতদের মতো অনেক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সারাদিন রোজা রেখে সচল রাখছেন রাজধানীর রাজপথ। রোজা রেখে অফিসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে যারা ইফতারের আগেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন, সেখানে ট্রাফিক পুলিশদের তুলনা করা যায় যেন সুপারম্যানের সঙ্গে!
একজন ট্রাফিক কনস্টেবল বলেন, "আমরা চাই মানুষজন খুব সুন্দরভাবে বাসায় যেতে পারে, ইফতার করতে পারে। এটা আমরা আমাদের এবাদতের অংশ মনে করি। আমাদের এই কাজের জন্য মানুষজন সুস্থভাবে বাসায় পৌঁছে ইফতার করতে পারলে, সেটাই আমাদের ভালো লাগার বিষয়।"
রোজা অবস্থায় সারাদিন ট্রাফিক ডিউটি পালন করা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা, যানজট সামলানো, উল্টোপাল্টা ড্রাইভিং রোধ করা ও পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—এসবই তাদের প্রতিদিনের দায়িত্ব।
তবে সব সময় কাজ সহজ হয় না। "সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে যখন জনগণের নিরাপত্তার জন্য কাজ করি, কিন্তু তারা কথা শুনতে চায় না। সিগন্যাল অমান্য করে, ফলে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এই সময় কষ্ট বেশি অনুভূত হয়," বলেন এক ট্রাফিক সদস্য।
পরিবার থেকে দূরে থাকলেও দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকার অটুট। "পরিবার থেকে বলা হয়, জনগণের সেবা করো, দেশের জন্য কাজ করো। এটিই আমাদের আরও উৎসাহ দেয়," যোগ করেন আরেকজন পুলিশ সদস্য।
ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি কিছু শিক্ষার্থীও চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। তারা রোজা রেখে চার ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন, এরপর বাড়ি ফিরে মনোযোগ দিচ্ছেন পড়াশোনায়।
এক শিক্ষার্থী জানান, "পরিবার ছাড়া ইফতার করা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। তবে আমাদের কাজের উদ্দেশ্য নগরবাসীকে সঠিক সময়ে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এজন্য একটু আত্মত্যাগ করতেই হয়।"
রমজান মাসে ট্রাফিক পুলিশের এই প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রম শহরের নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাদের সাহসিকতা ও একাগ্রতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
নুসরাত