অবৈধ বালুর ঘাটের দখল নিতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২২

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে অবৈধ বালুর ঘাট দখল ও কনসোডিয়ামের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (০৮ মার্চ) সন্ধ্যায় উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের ন্যাংড়া বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনায় ২২ জন আহত হয়েছেন।

এতে ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি গ্রুপের ১০ জন এবং বিএনপির সদস্য গ্রুপের ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছ সংশ্লিষ্ট সূত্র।

স্থানীয়রা জানান, নিকরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ ও সদস্য রিপন ডাক্তারের সাথে সিরাজকান্দী বাজার এলাকার বাগানবাড়ীর অবৈধ বালুর ঘাট নিয়ন্ত্রণ ও বালুর ঘাটের কনসোডিয়ামের বিপুল অঙ্কের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন বিষয়টি মীমাংসার জন্য উপজেলার ন্যাংড়া বাজারে উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু, নিকরাইল বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জুলহাস উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজিব হোসেন কফিলের উপস্থিতিতে বৈঠক বসে।

তর্কাতর্কির একপর্যায়ে আব্দুল লতিফ ও রিপন ডাক্তার গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুই গ্রুপের ২২ জন আহত হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ঘটনায় আহতদের মধ্যে এক নারীসহ ৮/৯ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত রিপন ডাক্তার বলেন, ‘আব্দুল লতিফ তার দলবল নিয়ে বিগত ১৬/১৭ বছর নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা নূহু মেম্বারের সঙ্গে আঁতাত করে আমাদের জায়গা জমি অবৈধভাবে জবর দখল করে বালুর ব্যবসা করেছে। সেখানে তাদের কোনো জমিজমা নেই। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আমরা আমাদের জায়গায় ঘর তুলে ফেরত নেওয়ার জন্য দখলে নেই। এনিয়ে লতিফ ও তার লোকজন বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিতো। শনিবার দুপুরে ন্যাংড়া বাজার এলাকায় সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। লতিফের লোকজন হট্টগোল সৃষ্টির একপর্যায়ে সালিশ বৈঠক স্থগিত করে উপজেলার বিএনপির নেতৃবৃন্দ। পরে হঠাৎ করে লতিফের লোকজন আওয়ামী লীগের লোকজনের সহযোগিতায় আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করলে ১২ জন আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’

নিকরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ও আহত আব্দুল লতিফের লোক পক্ষের পলশিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হোসেন আলী শেখ বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের ভাই-ভাতিজা ও রিপন ডাক্তারের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমিসহ ১০ জন আহত হই। এ ব্যাপারে উপজেলা নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে নিকরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্বের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ন্যাংড়া বাজারের জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভে একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেই সালিশ বৈঠকে লোকজন বেশি হওয়ায় তা স্থগিত করে দেওয়া হয়। পরে রাস্তায় দু’পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।’

অবৈধ বালুর ঘাট দখল ও বালু ঘাটের কনসোডিয়ামের টাকা ভাগাভাগির সালিশ বৈঠক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, এটি কোনো বালুর ঘাটের বিষয় ছিল না।

এ ঘটনায় বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে ভূঞাপুর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, ‘গত শনিবার বিকালে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের ন্যাংড়া বাজারে বালুর ঘাট নিয়ে সালিশ বৈঠকে সংঘর্ষ হচ্ছে এমন ঘটনা জানার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’