
নাহিদ ইসলাম
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জননিরাপত্তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নাহিদ বলেন, গত সাত মাসে আমরা আশা করেছিলাম, কিছুটা সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশের কার্যক্রম ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিছুটা উন্নতি হলেও তা প্রত্যাশার চেয়ে কম।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। ২৬ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ নির্বাচনের সময় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, যখনই নির্বাচন হোক, আমরা অংশ নিতে প্রস্তুত।
তবে নির্বাচনের আগে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি। নাহিদের ভাষ্য, আমরা যদি এক মাসের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে নির্বাচনের জন্য তৎক্ষণাৎ প্রস্তুত হব। কিন্তু যদি বেশি সময় লাগে, তাহলে নির্বাচন পেছানো উচিত।
তার দল গঠনের জন্য সমাজের বিত্তশালীরা অর্থায়ন করছেন উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা শীঘ্রই নতুন অফিসের জন্য ক্রাউডফান্ডিং শুরু করব এবং নির্বাচনের জন্য একটি তহবিল গঠন করব।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ তাদের নেতৃত্বাধীন দল বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে; যেখানে দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। দলগুলো দ্রুত নির্বাচন দাবি করছে এবং বলছে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত।
অস্থিরতার মধ্যে শেখ হাসিনার সাবেক সরকারের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলার অভিযোগও এসেছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার এসব অভিযোগকে অতিরঞ্জিত বলে দাবি করেছে। নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে মাত্র এক সপ্তাহ আগে গঠিত এনসিপি তাতে অংশ নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকবে।
‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রসঙ্গে নাহিদ আরও বলেন, এটি একটি নীতি ঘোষণাপত্র যা অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুত করতে চায়।
ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের জনগণের আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত করবে এবং গত বছরের সহিংসতায় নিহত এক হাজার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। যখন অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘোষণাপত্র তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয় তখন ছাত্র আন্দোলনকারীরা সংবিধান পরিবর্তনের দাবি প্রত্যাহার করেছে।
নাহিদ আরও বলেন, যদি আমরা এক মাসের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আমরা অবিলম্বে নির্বাচনের জন্য ডাক দিতে পারব। তবে যদি বেশি সময় লাগে, তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া উচিত। নাহিদ জানান, বাংলাদেশজুড়ে অনেক ধনী ব্যক্তি দলটিকে অর্থায়ন করছেন।