
আজ মাহে রমজানের ষষ্ঠ দিবস
আজ মাহে রমজানের ষষ্ঠ দিবস। মাহে রমজান কুরআন নাজিলের মাস। এজন্য ইসলামী শরীয়ত এ মাসের রজনীভাগে খতমে তারাবির মাধ্যমে কুরআন শরীফ তিলাওয়াতকে অবারিত করেছে। কারণ, কুরআন শরীফের এ তিলাওয়াত মুমিন মুসলমান মাত্রই মহিমান্বিত ও উপকৃত হয়। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম মানব জাতির জন্য মহান ¯্রষ্টা আল্লাহপাকের পক্ষ হতে সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ হেদায়াত বা দিক নির্দেশনামূলক গ্রন্থ।
এটি গোটা মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক। এখানে শিক্ষা ও সভ্যতা অর্জনের সব উপাদান ও সূত্র নিহিত রয়েছে। এককালে এটিকে মর্যাদা দান, তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে মুসলিম জাতির সমৃদ্ধময় গৌরবদীপ্ত উত্থান ঘটেছে।
কুরআনুল কারীমের ভূমিকা ও প্রভাব সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে বলা হয়েছে: এ সেই কিতাব! যাতে কোনো সন্দেহ নেই। (এটি) মুত্তাকীদের জন্য পথনির্দেশ...। উদ্ধৃত অংশে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কুরআন শরীফ তাদেরকেই সঠিক পথ দেখাবে, যারা সঠিক পথ পাওয়ার জন্য আগ্রহী ও উদগ্রীব থাকে, হেদায়াতের মন-মানসিকতা নিয়ে এ পবিত্র গ্রন্থ তিলাওয়াত করে।
যারা পূত-পবিত্র মন-প্রাণ নিয়ে এটি অধ্যয়ন ও তিলাওয়াত করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে তারা অবশ্য সৌভাগ্যময় জীবনের অধিকারী হবে। এ কুরআনকে বলা হয়েছে শিফাউন লিন-নাস মানব জাতির জন্য নিরাময় বস্তু। আল্লাহতায়ালা বলেন, এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা ধারা, আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশাবলী। (৩:১৩৮)।
এটি ভক্তিসহকারে বরকত লাভের আশায় তিলাওয়াত করলে আল্লাহ অভাবীর অভাব মোচন করেন, দুঃখী মানুষের দুঃখ দূর করেন। অন্তর ভরে দেন প্রশস্ততা ও প্রশান্তিতে। এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) ঐতিহাসিক ইবনুল আসাকীরের বরাত দিয়ে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন।
ঘটনাটি হলো এই, বিখ্যাত সাহাবী ও কুরআন বিশেষজ্ঞ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদি) যখন অন্তিম রোগ শয্যায় শায়িত ছিলেন তখন মুসলিম জাহানের তৎকালীন খলিফা আমীরুল মোমেনীন হযরত উসমান (রাদি) তাকে দেখতে যান। এ সময় তাদের মধ্যে শিক্ষাপ্রদ কথোপকথন হয়। তা নি¤œরূপ:
হযরত উসমান : মা তাশতাকী- আপনার অসুখটা কি?
হযরত ইবনে মাসউদ : আমার পাপসমূহই আমার অসুখ।
ওসমান গণি : আপনার চাহিদা বা বাসনা কি?
ইবনে মাসউদ : রাহমাতু রাব্বী অর্থাৎ আমার মহান প্রভু আল্লাহপাকের দয়া ও রহমতের ভিখারী।
ওসমান গণি : আমি আপনার জন্য কোনো চিকিৎসক ডাকব কি?
ইবনে মাসউদ : চিকিৎসকই আমাকে রোগাক্রান্ত করেছে।
উসমান গণি : আমি আপনার জন্য সরকারি বায়তুল মাল থেকে কোনো উপঢৌকন পাঠিয়ে দেব কি?
ইবনে মাসউদ : আপনি চিন্তা করেছেন যে, আমার কন্যারা দারিদ্র্য ও উপবাসে পতিত হবে। কিন্তু আমি এরূপ চিন্তা করি না। কারণ আমি কন্যাদের জোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, তারা যেন প্রতিরাতে (কুরআন শরীফের) সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করে। কেননা মহানবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজের পর সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করে, সে কখনো উপবাসে আক্রান্ত হবে না।(ইবনে কাসীর)।
এভাবে কুরআন শরীফ ও হাদিস শরীফে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যায়নের বহুবিধ বরকত ও উপকারিতার কথা বর্ণিত হয়েছে। আমরা আমাদের জীবনের স্বার্থে কুরআনমুখী অভ্যাস গড়ে তুলব।