ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

সাংবাদিকদের আমীর খসরু

শেখ হাসিনার বিচারের সঙ্গে ভোটের কোনো সম্পর্ক নেই

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৬, ৬ মার্চ ২০২৫

শেখ হাসিনার বিচারের সঙ্গে ভোটের কোনো সম্পর্ক নেই

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

অবিলম্বে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনার বিচারের সঙ্গে ভোটের কোনো সম্পর্ক নেই। বুধবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেল ‘শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লারস অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, নিজস্ব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতেই হবে এমন মনোভাব শেখ হাসিনার স্বৈরাচারকে মনে করিয়ে দেয়।
আমীর খসরু বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারও শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অপরাধীদের বিচার করার বিষয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। শুধু শেখ হাসিনা নয়, আওয়ামী লীগের অন্যান্য অপরাধীরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারের বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই স্বাধীন বিচার বিভাগ বিশ্বাস করলে, নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া কাম্য নয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে নানা প্রস্তাব জুড়ে দেওয়া ফ্যাসিবাদী চরিত্রের মতো। সরকার দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে দেশের মানুষ এটাই প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, রাজনীতির সঙ্গে দেশের অর্থনীতি, সমাজের নীতি-নৈতিকতাও ধ্বংস হয়েছে। একটি পক্ষের নিজস্ব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতেই হবে এমন মনোভাব পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মনোভাবকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
এর আগে গোলটেবিল বৈঠকে আমীর খসরু বলেন, দূষণের দোহাই দিয়ে শিপ ব্রেকারের মতো শিল্পকে শুধু মনিটরিং করা হচ্ছে, সাহায্য করা ভুলে গেছে সরকার। এ শিল্পকে বাধাগ্রস্ত না করে সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অতি নিয়ন্ত্রণের দেশ হয়ে গেছে। মানুষ শিল্প কারখানা দিতে পারছে না। সরকার ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করবে। আমরা যদি জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারি তবে, সব ট্রেড সংগঠনগুলো সেলফ রেগুলেট করবে।
কিচেন কেবিনেট ড. ইউনূসকে একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেন না- রিজভী ॥ সরকারে কিচেন কেবিনেট আছে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই কেবিনেট প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেন না। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস  ক্লাবের সামনে ‘নন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ’ আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা  বলেন।

রিজভী বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কিচেন কেবিনেট (সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ লোক যারা আন অফিসিয়াল পরামর্শদাতা) আছে। তারা সরকার প্রধানের কান ভারি করেন এবং উন্নয়নমূলক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেন না।
রিজভী বলেন, যারা সমাজে আলো ছড়ায়, মানুষকে আলোকিত করে তাদের ধরনা দিতে হচ্ছে সচিবালয়ে। অথচ যারা বাজারে সিন্ডিকেট করছে, তারা কিন্তু গ্রেপ্তার হন না। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ দেখি না। পেটের ক্ষুধা থেকে নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যে দাবি তুলেছেন, তাতে কোনো কর্ণপাত করছে না সরকার। 
রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তো আবু সাঈদে রক্তের সরকার, মুগ্ধের  রক্তের সরকার। যারা সমাজে আলো ছড়ায়, তারা খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় অবস্থান করছে অথচ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি দাওয়া পূরণের কোনো আশ্বাস নেই। তার মানে সরকারে কিছু গণবিরোধী আছে।
রিজভী বলেন, এখানে অনেক শিক্ষক আছেন যারা ২৭ বছর ধরে ছাত্র তৈরি করেছেন, যারা সমাজের অনেক দায়িত্ব পালন করছেন। তারা কি দেশের নাগরিক না? তা হলে তাদের থেকে কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তো শিক্ষকবান্ধব, তিনি শিক্ষকদের নিয়েই আন্দোলন করেছেন। 
তবে তার উপদেষ্টা পরিষদে কিছু গণবিরোধী উপদেষ্টা আছেন। তারা ভালো কাজগুলো হতে দিচ্ছে না। শিক্ষকদের অনাহারে রেখে, তার সন্তানদের অনাহারে রেখে আপনারা কী আনন্দ পাবেন? 
রিজভী বলেন,  ড. আমিনুল ইসলাম একজন মেধাবী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। তার নাম শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে শোনা যাচ্ছিল। পরে দেখলাম তার জায়গায় আরেকজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ড. আমিনুল ইসলামের মতো একজন বিশিষ্ট সনামধন্য ও খ্যাতিমান শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ কেন?
আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে রিজভী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতির ২০-২৫ বছর বা তারও অধিক সময় ধরে নন এমপিও থাকবে, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে না, শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি বেতন পাবে না, তা হতে পারে না। শিক্ষক-কর্মচারীরা এই রমজান মাসে রাজপথে থেকে বেতন ভাতার জন্য আন্দোলন করবে এটা আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে আশা করি না। জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজকে অভুক্ত রেখে অবহেলা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া,  নন-এমপিও সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. দবিরুল ইসলাম, মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. নাজমুস সাহাদাত আজাদী, সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. মনিমুল হক, যুগ্ম  সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. ইমরান বিন সোলায়মান, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ বাকী বিল্লাহ, সমন্বয়ক প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর মো. এরশাদুল হক, সমন্বয়ক সুপার মো. ফরহাদ হোসেন বাবুল, সমন্বয়ক প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. আবতাবুর আলম প্রমুখ।

×