
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন হচ্ছে শিক্ষা
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেছেন, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন হচ্ছে শিক্ষা। আমি এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার কথা ভাবি, যা হবে ব্যক্তির কর্মদক্ষতা অর্জন, তার আত্মোন্নয়নের উপযুক্ত পথ; যা হবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উৎকর্ষের সহায়ক এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির উপায়।
আমি এমন শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভেতরেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাবে এবং বাংলাদেশ থেকেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে বিদায় এবং সি আর আবরারের যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নতুন উপদেষ্টা বলেন, আমরা স্বল্পমেয়াদি বিষয়গুলো চিহ্নিত করব। সেগুলোর ব্যাপারে কাজ শুরু করব। দীর্ঘমেয়াদি যে ইস্যুগুলো আছে, এগুলো সমাধান করতে হবে বলে আমরা যদি মনে করি, তবে অংশীজনদের সঙ্গে সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করব। দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা এক বছরে হবে না, পাঁচ বছরে হবে না।
কিন্তু এ জন্য যে ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া, এ জন্য অনেকগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি অনেক কিছু আছে। ৮-১০ মাসের মধ্যে এ সরকারের মেয়াদকালীন বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, আশা করি আমরা একই সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারব। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা হচ্ছে জনগণের বড় রকমের অধিকার। এই ফাউন্ডেশনাল খাত নিয়ে যে দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, আশা
করি সেই দায়িত্ব আমরা যৌথভাবে পালন করব। সহযাত্রী হিসেবে আমরা সবাই থাকব।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে সি আর আবরার বলেন, ‘আমি জীবনে কোনোদিন এ ধরনের পরিসরে এসে বসে... এদিকে বসব, এটা কিন্তু কখনোই ভাবা হয়নি। বিভিন্ন সময় আইন-নীতি পরিবর্তন করার বিষয়ে মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে বসেছি। আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি শ্রম অভিবাসন, শরণার্থী, বাস্তুচ্যুত মানুষ, ক্যাম্পে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীÑ এ বিষয়গুলো নিয়ে মোটামুটি সক্রিয় নাগরিক হিসেবে কাজ করেছি।’
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি, নিয়মকানুন মেনে, নৈতিকতা মেইনটেইন করে, জ্ঞাতসারে আমি কোনো ক্লাস মিস করিনি। পরীক্ষার খাতা মোটামুটি সময়মতো জমা দিয়েছি। শিক্ষক হিসেবে যেসব প্রশাসনিক দায়িত্ব এসেছে সেগুলো পালনের চেষ্টা করেছি।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নতুন উপদেষ্টা বলেন, ‘সমস্যা আছে সমস্যা থাকবে। আমি মনে করি আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমাদের যে গুরু দায়িত্ব সেটা পালন করব। আমরা জনগণের টাকায় বড় হয়েছি, সে কারণেই তাদের প্রতি আমাদের একটা দায়িত্ববোধ আছে। সেই দায়িত্ব আমাদের যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও ইন্টিগ্রিটি নিয়ে পালন করতে হবে।’
উপদেষ্টা হিসেবে শপথ ॥ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের নতুন সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সি আর আবরার (চৌধুরী রফিকুল আবরার)। বুধবার বেলা ১১টায় বঙ্গভবনে তাকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। সংক্ষিপ্ত শপথ অনুষ্ঠানে সি আর আবরার প্রথমে উপদেষ্টা পদে এবং পরে গোপনীয়তার শপথ পাঠ করেন। শপথগ্রহণ শেষে তিনি শপথ বইয়ে সই করেন।
শপথ নেওয়া নতুন এই উপদেষ্টাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টাদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্ব বণ্টন/পুনর্বণ্টন করেছেন। মন্ত্রণালয় পুনর্বণ্টন অনুযায়ী এখন থেকে শুধু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তার অপর মন্ত্রণালয় শিক্ষার দায়িত্ব সামলাবেন সি আর আবরার।
প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ ॥ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় শেখ মইনউদ্দিন ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
বুধবার তাদের বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, তারা দুইজন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন।
তাদের মধ্যে শেখ মইনউদ্দিন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আর ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করবেন।
এর আগে, একই পদমর্যাদায় তিনজন বিশেষ সহকারীকে তিনটি দপ্তরের দায়িত্ব দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন দুইজনকে নিয়ে তাঁর বিশেষ সহকারী হলেন পাঁচজন।