ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ৫ মার্চ ২০২৫

অগ্নিঝরা মার্চ

বাঙালিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানি সামরিক হানাদাররা

বাঙালিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানি সামরিক হানাদাররা। অন্যদিকে যে কোনো আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে মরিয়া বীর বাঙালি। সভা, মিছিল, কার্ফু ভঙ্গ, গুলিতে আত্মহত্যা সব মিলিয়ে অগ্নিগর্ভ সময় বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি। 
উনিশশ’ একাত্তর সালের ৬ মার্চেও ছিল হরতাল। সকাল ছটা থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন একাত্তরের এদিন দুপুরে। তার পুরো ভাষণই ছিল মুক্তিকামী বীর বাঙালিদের উদ্দেশে করা হুমকি ও ধমক। ছিল পাকি সামরিক বাহিনী দিয়ে বাঙালিকে শায়েস্তা করার হুমকি। স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানি সামরিক হানাদাররা। 
‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত’- বেপরোয়া বাঙালি তখন স্বাধীনতার স্বপ্নে উদ্দীপ্ত।  তারা ফুঁসছিল বিদ্রোহ, বিক্ষোভ ও ঘৃণায়। পরদিন ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণে তিনি কী বলবেন? বহুল আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতার ঘোষণা তার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হবে কি? এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত ছিল না সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির পাকিস্তানি হানাদারদের মনে অজানা শঙ্কা। 
একাত্তরের পহেলা মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচি ৭ মার্চ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের একদিন আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হুমকি-ধমকি স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে হতাশ, ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত করে তোলে। 
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের ভাষণের পর আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। ঘর থেকে রাজপথে নেমে আসে বিক্ষুব্ধ লাখো বাঙালি। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অধীর অপেক্ষা-দৃষ্টি রেসকোর্সের ময়দানের জনসভার দিকে। 
এদিকে অগ্নিগর্ভ মার্চে বাঙালির প্রবল আন্দোলনে দিশাহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা। কীভাবে বাঙালির এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা যায়, সে বিষয়ে নীলনকশা করতে থাকে সামরিক জান্তা ও তাদের এদেশীয় দোসররা। 
বিশ্বের কাছে স্বাধীনতার জন্য বাঙালির এই বাঁধভাঙা আন্দোলন-সংগ্রামের খবর যাতে কোনোভাবেই বাইরে যেতে না পাওে, সেজন্য তৎপর হয়ে ওঠে পাকি জেনারেলরা। শুধু সেন্সরশিপ আরোপই নয়, কোনোভাবেই যাতে বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের খবর না ছাপা হয়, সেজন্য প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে ফোন বা সশরীরে গিয়ে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়।

বাঙালি জাতির এমনই আন্দোলনের-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছিল সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম। প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করে বীর বাঙালিরা একসাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি তাই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করছে দেশমাতৃকার জন্য আত্মোৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

×