
ছবি: সংগৃহীত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত উপদেষ্টা অধ্যাপক সি.আর. আবরারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য। আজ (মঙ্গলবার) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি অধ্যাপক আবরারের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন।
অধ্যাপক সি.আর. আবরার ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার পাইকান্দিতে। তিনি ঢাকার অভিজাত এলাকা ওয়ারীতে বেড়ে উঠেছেন। তার নানা, আব্দুল্লাহ জহিরুদ্দিন উদ্দিন লাল মিয়া, ফরিদপুরের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে মানবিক শাখায় স্ট্যান্ড করেছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) এবং এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন, উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
অধ্যাপক আবরার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছেন। তিনি শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরেও বিভিন্ন গবেষণায় সম্পৃক্ত করেছেন। ১৯৯১ সালে বিদেশে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে তিনি শাহদীন মালিক, তাসনিম সিদ্দিকী ও সুমাইয়া খায়েরের সঙ্গে মিলে ‘Refugee and Migratory Movements Research Unit (RAMRU)’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় নীতি প্রণয়ন ও অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
অধ্যাপক আবরার ছাত্রজীবন থেকেই গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি আহমদ শরীফ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আহমদ ছফা, হুমায়ুন কবির ও আবুল কাশেম ফজলুল হকের সান্নিধ্যে আসেন এবং ১৯৭০ সালে ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে ‘বাংলাদেশ লেখক শিবির’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৭৩ সালে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হলে তিনি ‘মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সহায়তা কমিটি’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া, ১৯৭৫ সালে মাওলানা ভাসানীর আহ্বানে ফরাক্কা লং মার্চেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
২০০৮ সালে বাংলাদেশে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব নিশ্চিতকরণে অধ্যাপক আবরারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কোভিড-১৯ মহামারির সময় দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দিতে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন, যা তাদের মুক্তি নিশ্চিত করে।
অভিবাসন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন আদায়ে অধ্যাপক আবরার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের একচ্ছত্র আধিপত্য ভাঙতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করেন, যা দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।
গত এক দশকে অধ্যাপক আবরার বিচারবহির্ভূত হত্যা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সীমান্ত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে দেড় শতাধিক নিবন্ধ লিখেছেন। তার লেখনী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অধ্যাপক সি.আর. আবরারকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য পিনাকী ভট্টাচার্য তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অধ্যাপক আবরারের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন গতিতে এগিয়ে যাবে।
সায়মা ইসলাম