ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

ঘুস বাণিজ্যে বদলি, হত্যা মামলায় গ্রেফতার; বর্তমানে ওসি ছাড়াই চলছে ভাঙ্গা থানা

আবিদুর রহমান নিপু, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ৫ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০৫:৫৩, ৬ মার্চ ২০২৫

ঘুস বাণিজ্যে বদলি, হত্যা মামলায় গ্রেফতার; বর্তমানে ওসি ছাড়াই চলছে ভাঙ্গা থানা

ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় বিবিধ ঘটনায় সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না পুলিশের। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ছাড়াই চলছে ভাঙ্গা থানা, গত সাত দিন ধরে ওসির দায়িত্ব পালন করছেন তদন্ত ওসির দায়িত্বে থাকা ইন্দ্রজিত মল্লিক। নতুন ওসি শফিকুল যোগদানের মাত্র সাত দিনের মাথায় ডিবি পুলিশ কর্তৃক গ্রফেতার হওয়ায় তিনি এখন ওসির দায়িত্বে আছেন।

গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ওসি শফিকুল ইসলামকে গাজীপুরে (সাবেক কর্মস্থল) জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র হত্যা মামলায় ডিবি পুলিশ ভাঙ্গা থানা থেকেই গ্রেফতার করে। এর আগে যোগদানের পরে যুবলীগ নেতাকর্মীরা ফুল দেওয়ায়ও তিনি রাজনৈতিক মহলে বিতর্কিত হয়েছিলেন।

গ্রেফতারকৃত শফিকুল ইসলামের আগের ওসি মোকছেদুর রহমানকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগে  এ মাসের শুরুর দিকেই বদলি করা হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভাঙ্গা থানায় যোগ দিয়ে নিজেকে তিনি বিএনপি পরিবারের সদস্য দাবি করেন। তার বিরুদ্ধে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিতর্কিত একদল সাংবাদিক নেতা ও দলীয় কর্মীদের সাথে নিয়ে অলিখিত দালাল চক্র দিয়ে ঘুস বাণিজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ ছিলো।

এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, আ.লীগ সরকারের সময়ে তৎকালীন সাংসদ নিক্সন এবং আ.রাজনীতিবিদ কাজী জাফর উল্লাহ'র নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন এমন অনেক পুলিশ সদস্য এখনও থানায় রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও পুলিশ সদস্যদের অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

এ নিয়ে গত ৫ মাসে বিতর্কিত ওসির বদলি, হত্যা মামলায় নতুন ওসিকে গ্রেফতার, পলাতক আ. লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে পুলিশের ধীরগতি, মাদক কারবারিদের গ্রেফতারে বিশেষ অগ্রগতি না থাকা ইত্যাদি বিবিধ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ভাঙ্গা থানার পুলিশিং কার্যক্রম চরম বিতর্ক ও সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে।

এছাড়া আজ বুধবার (৫ মার্চ) ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর আস্থাভাজন নেতাদের থানার অভ্যন্তরে পুলিশের এসআই মোশাররফ হোসেনের সাথে তোলা কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় থানার পুলিশিং কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে নানা মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে এসআই মোশাররফ বলেন, "সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশ নিয়ে যদি কেউ কোন পোস্ট না বুঝে ছেড়ে দেয়, আমাদের কিছু করণীয় নেই। পোস্টদাতা যেমন বুঝেছেন, তিনি তা-ই করেছেন।"

বর্তমানে ওসির দায়িত্বে থাকা ইন্দ্রজিত মল্লিক (তদন্ত ওসি) বলেন, "পুলিশ জানতে পেরেছে যে একজন বিএনপি নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। পুলিশ কাউকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে অথবা গ্রেফতার করলে অনেক সময় কিছু মালামাল পুলিশের কাছে থাকে। কিন্তু জামিনে এসে সেই মালামাল আবার পুলিশের কাছ থেকেই ফেরত নিয়ে থাকে। কিন্তু অনেকে না বুঝতে পেরে এটা নিয়ে ট্রল করেছে।"

ভাঙ্গা থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি সার্কেল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টটি দেখেছেন বলে জানান। এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে তিনি বলেন, "পুলিশ সব সময় চোখ কান খোলা রেখে পথ চলে। থানা সবার জন্য উন্মুক্ত। কেউ যদি আদালতের জামিনে এসে পুলিশের সাথে দেখা বা কথা বলেন পুলিশের কিছু করার নেই।"

রাকিব

×