
ছবি: সংগৃহীত।
মাওলানা ভাসানী অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে ফারাক্কা বাঁধ কোনো সাধারণ প্রকল্প নয়; এটি বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ সংকট তৈরি করতে পারে। তাই তিনি সীমান্তে জনসমাগম ঘটিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তবে ভারত তার কথায় কান দেয়নি। তারা কলকাতা বন্দর রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়নি। এরই ফলে চালু হয় ফারাক্কা বাঁধ, যা কার্যত বাংলাদেশের পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অস্তিত্বের ওপর আঘাত হানে।
ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পারে যে তারা প্রতারিত হয়েছে। আগের মতো পর্যাপ্ত পানি আর পাওয়া যাচ্ছে না, প্রমত্তা পদ্মা নদী ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে, আবাদি জমি বিপর্যস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় বাঁধটি অপসারণের দাবি উঠেছে, এমনকি ভারতেও এই দাবি উত্থাপিত হয়েছে। অবশেষে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত হয় ৩০ বছরের মেয়াদী গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি কখনোই পায়নি।
পদ্মার পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে গেছে যে এখন নদীর বুকে কিছু এলাকায় মোটরসাইকেল ও মহিষের গাড়িও চলতে দেখা যায়। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মরুভূমির বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। তবে ভারতের অনুগত গোষ্ঠী এ নিয়ে কখনো মুখ খোলেনি; ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কেউই ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবি তুলতে সাহস দেখায়নি।
অবশেষে সেই দিন আসে ৫ আগস্টের পর, যখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি বদলে যায়। সীমান্তে আগ্রাসন ঠেকাতে বিজিবির সঙ্গে সাধারণ জনগণও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে নামে। এখন বাংলাদেশ তার ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রশ্ন করতে শিখেছে, চোখে চোখ রেখে কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের মানসিকতা পুরো দেশজুড়ে দৃশ্যমান।
২০২৬ সালে শেষ হচ্ছে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা-পদ্মা পানি বণ্টন চুক্তি। এ চুক্তি নবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বাংলাদেশ ও ভারত বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা ভারতে অবস্থান করছেন এবং পানিপ্রবাহ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নবায়নের বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল এই চুক্তি থেকে যথাযথ সুবিধা আদায়ের জন্য শতভাগ চেষ্টা করবে বলে স্পষ্ট করেছে। তবে যদি বাংলাদেশ ন্যায্যতা না পায়, তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার পথ খোলা রয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছে। ৫ দিনের সফরে তারা গঙ্গার পানিপ্রবাহ ও স্তর সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করবেন এবং ৬ ও ৭ মার্চ কলকাতায় ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই আসন্ন এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=pNtdzpFMcgA
সায়মা ইসলাম