ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

সাংবাদিকদের সিইসি

এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৪ মার্চ ২০২৫

এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত

এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনেই

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এনআইডির বিষয়ে সরকারকে লিখিতভাবে ইসির মতামত জানানো হবে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন শীর্ষক একটি চিঠি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদকে পাঠান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. নিকারুজ্জামান। এতে নির্বাচন কমিশন নয় বরং সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন নামে নতুন একটি পৃথক কমিশনের অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। এর পরই ইসি কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেন।

এর পরই আলোচনায় উঠে আসে  জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ বাতিলের জন্য রহিতকরণ অধ্যাদেশ হচ্ছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের আলোকে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি নিয়ে পৃথক কমিশন গঠন করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছ থেকে নিয়ে যাবে- এমন তথ্য জানা নেই। সরকারের চিন্তা সব সেবা এক জায়গা থেকে দেওয়া যায় কি না। কিন্তু আমাদের প্রতিনিধি সরকারকে জানিয়ে এসেছেন আমাদের মতামত। সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেবে না বলেই প্রত্যাশা করি। লিখিতভাবে ইসির মতামত জানানো হবে। 
সিইসি বলেন, এনআইডি কার্যক্রম নিয়ে গেলে সমস্যা হবে, তা আমরা সরকারকে জানাব। এখন ভোটার নিবন্ধন চলছে, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আছে। এর মধ্যে তড়িঘড়ি করে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে হয় না। এমন আলোচনায় ইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। তাই আমরা মনে করি এনআইডি কার্যক্রম ইসিতে থাকা উচিত।
ইসি সূত্র জানায়, জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে দুর্ভোগ ও জটিলতা নিরসনে স্বতন্ত্র কমিশন প্রতিষ্ঠায় ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন- ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতও গ্রহণ করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকে ইসি সচিবালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত প্রদান সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে আইন করা হয়েছিল, ক্ষমতার পালাবদলে আবার তা বাতিল চেয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তাদের দাবি অনুযায়ী আইনটি বাতিল হলে এনআইডি সেবা বরাবরের মতোই নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে। এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর সরকারকে এখন অধ্যাদেশ জারি করে আইনটি বাতিল ও আগের আইন বহাল করতে হবে।

এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিজেদের কাছে রাখতে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এটা সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এরই মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা’ নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করার বিষয়ে সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে। 
উল্লেখ্য, ২৬ জানুয়ারি সিইসি বলেন, ভোটার এনআইডি কার্ড, ভোটার রেজিস্ট্রেশন আরেকটা কর্তৃপক্ষকে দিলে আমাদের কি তার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে? ইটস ইমপসিবল। 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সমীচীন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা এবং জনদুর্ভোগ পরিহার করা আবশ্যক।

এই উদ্দেশ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপস্থাপন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সিভিল রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সুসংহত করতে একটি সংবিধিবদ্ধ, স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আইন সংশোধন সমীচীন উল্লেখ করে সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন)- ২০২৫ এর খসড়া নিয়ে মতামত নেওয়া হচ্ছে।
প্রস্তাবিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন-২০২৫ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন হবে পাঁচ সদস্যের, মেয়াদ পাঁচ বছর। সম্পূর্ণ সংবিধিবদ্ধ কমিশনটির নিজস্ব তহবিল থাকবে, যেখানে সরকার এবং অন্য উৎস থেকে অর্থবহন করা হবে। তবে কমিশন তা স্বাধীনভাবে ব্যয় করবে।
কমিশন, অধ্যাদেশের অধীন সিভিল রেজিস্ট্রেশনের উদ্দেশে যে কার্যাবলি সম্পাদন করবে তার মধ্যে রয়েছে- 
(ক) নাগরিকের জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ ও দত্তক নিবন্ধন এবং মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের সঙ্গে স্থানান্তর, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার তথ্য-উপাত্ত অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যমান সিভিল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থার সার্বিক সমন্বয় ও উন্নয়ন সাধন।
(খ) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সব দায়িত্ব পালন।
(গ) ইউনিক আইডি, সিআরভিএস এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার, ইন্টারঅপারেবিলিটি স্ট্যান্ডার্ড এবং সিটিজেন কোর ডাটা স্ট্রাকচারের ভিত্তিতে সমন্বিত সেবা দেওয়া ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন।
(ঘ) সিভিল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বিকেন্দ্রীকরণে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির (যেমন: ব্লকচেইন) ব্যবহার উপযোগিতা, আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পর্যালোচনাপূর্বক সরকারকে সুপারিশ দেওয়া। (ঙ) সিভিল রেজিস্ট্রেশন তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। (চ) নাগরিক এবং সরকারি-সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য দ্রুত ও সহজ উপায়ে সিভিল রেজিস্ট্রেশন তথ্য-উপাত্ত দেওয়া। (ছ) সিভিল রেজিস্ট্রেশন স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, জনবান্ধব করার উদ্দেশে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ।
(জ) সমন্বিত সেবা দেওয়া প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণের উদ্দেশ্যে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহিত সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সম্পাদন। (ঝ) সিভিল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী, বিদেশী রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সহিত চুক্তি সম্পাদন।

×