
ছবি: সংগৃহীত
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (NSU) স্থাপত্য বিভাগ ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (IDCOL) যৌথভাবে 'বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়নে Green Financing এর ভূমিকা' শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা আয়োজন করে। এই আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ, শিল্প বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি কর্মকর্তারা Green Financing (সবুজ অর্থায়ন) এর মাধ্যমে দেশের টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার গুরুত্ব নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আলোচনায় IDCOL এর চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার জনাব নাজমুল হক, নির্বাহী পরিচালক ও সিইও জনাব আলমগীর মোর্শেদ, এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আবদুর রব খানসহ আরও কয়েকজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার ইকবাল রাজ, উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক স্থপতি সুজাউল ইসলাম এবং সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি মুজতবা আহসান ছিলেন প্রতিবেদক।
প্যানেল আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ঝুঁকি এবং Green Financing এর সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের ১৭% ভূমি পানির নিচে চলে যেতে পারে এবং ২০% মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সৌরবিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও শক্তি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তির প্রসার অপরিহার্য বলে তারা মত প্রকাশ করেন।
বর্তমানে IDCOL দীর্ঘমেয়াদে স্বল্প সুদে (৫-৭% হার, ১০-২০ বছর মেয়াদে) অর্থায়ন করছে, যা বাণিজ্যিক ব্যাংকের তুলনায় অনেক সুবিধাজনক। বিশেষত ছাদ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ৫,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে এবং প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। IDCOL এর সিইও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে টেকসই উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি পরীক্ষামূলক (পাইলট) প্রকল্প হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব দেন।
আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের ৫৬% ভবনগুলোর শক্তি খরচ থেকে আসে, যা ভবিষ্যতে আরও টেকসই করার জন্য শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। গবেষণার মাধ্যমে শিল্প ও শিক্ষাখাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবনী সমাধানে নেতৃত্ব দিতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৫% ঋণ Green Financing এর জন্য বরাদ্দ করতে হয়, যা বর্তমানে ১৬% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জটিলতা ও উচ্চ সুদের হার এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। এর সমাধানে সবুজ বন্ড (Green Bonds) এবং নীতিগত প্রণোদনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
আলোচনায় সৌরশক্তির ক্ষেত্রে OPEX মডেলের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা হয়, যেখানে তৃতীয় পক্ষের বিনিয়োগকারীরা সৌর প্রকল্পে বিনিয়োগ করে এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনে নেয়। এই মডেল নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন।
শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত, এবং সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পখাতের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশকে টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এই আলোচনা Green Financing ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে গবেষণা, বিনিয়োগ ও নীতিগত সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এগুলো যদি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করতে পারবে।
রাকিব