
ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তিতাস গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের আগুনে দুই পরিবারের নারী ও শিশুসহ আটজন দগ্ধ হয়েছেন। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নং ঢাকেশ্বরীর শান্তিবাগ মধুগড় এলাকার মোঃ ইব্রাহীম খলিলের আমেনা ভিলায় এ ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা দগ্ধদের উদ্ধার করে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। সেখানেই তাদের চিকিৎসা চলছে। দগ্ধরা হলেন রিক্সাচালক হান্নান (৫০), তার স্ত্রী নুরজাহান (৩৫), মেয়ে জান্নাত (৪), মেয়ে সামিয়া (১১) ও ছেলে সাব্বির (১২)। এছাড়া আরেক পরিবারের পোশাক শ্রমিক সোহাগ (২৩), তার স্ত্রী রুপালি (২০) ও তাদের একমাত্র দেড় বছর বয়সী মেয়ে সুমাইয়া। সোমবার দুপুরে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন।
স্থানীয়রা জানায়, রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের ২নং ঢাকেশ্বরী-জালকুড়ি রোডের শান্তিবাগ মধুগড় এলাকার ইব্রাহিমের বাড়ির টিনশেড রুমে লাইনের গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দগ্ধ ৮ জনকে রাত সাড়ে ৪টার দিকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা নুরুল হক জানান, আমাদের এলাকার অনেক জায়গায় লিক আছে। তিতাস গ্যাসের অফিসে আবেদন জানিয়েও আমরা কোন প্রতিকার পাইনি। গত দুই বছর আগেও পাশের আরেকটি বাড়িতে এমন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তিনি আরও জানান, যেই বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই বাড়ির নিচ দিয়ে এক ইঞ্চি যে গ্যাসের পাইপটি আছে সেটার কয়েক জায়গা দিয়ে লিকেজ আছে। সেটা এলাকার সবাই জানে। বৃষ্টি হলে বাড়ির চারপাশ দিয়ে গ্যাসের বুদবুদ উঠে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনাস্থলের দুইটি রুমের প্রায় সবকিছুই পুড়ে গেছে এবং বিস্ফোরণে বাড়ির দেয়ালের কিছু অংশে ফাটল ধরেছে। ঘরের আসবাবপত্র লন্ডভন্ড হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা সুমন মোল্লা বলেন, "রাতে বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে আমরা বের হয়ে দেখি সবার শরীরের প্রায় বেশিরভাগ অংশ ঝলসে গেছে। তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের সব মানুষ জড়ো হয়ে তাদের উদ্ধার করে ৮জনকে হাসপাতালে পাঠাই। তবে বাচ্চাটার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো।"
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান সাংবাদিকদের জানান, গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৮ জন দগ্ধ হয়েছেন। হান্নানের শরীরে ৪৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এছাড়া নুরজাহানের ২২, জান্নাত ৩, সামিয়া ৭, সাব্বির ২৭, সোহাগ ৪০, রুপালি ৩৪ ও সুমাইয়ার ৪৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, "শিশুসহ ৮ জন দগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানতে পেরেছি।"
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, "রাতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল একটা সেমি পাকা ভবন। যার নিচে দিয়ে একটা গ্যাসের লাইন গিয়েছে। আমরা পরীক্ষা করে দেখলাম ওই গ্যাসের লাইনে একটা লিকেজ আছে। ওই লিকেজটা পুরোনো লিকেজ। এই লিকেজ থেকে এই ঘরগুলোতে একটা গ্যাস চেম্বার হয়ে আগুনের সংস্পর্শে এসে এই বিস্ফোরণ ঘটে। পাশাপাশি ২টি রুমের একটিতে ৩জন ছিলো আরেকটিতে ৫জন ছিলো। তারা ঢাকা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছে।"
আবীর