ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

স্মৃতিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান

নিরপরাধ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর বিরুদ্ধে যেভাবে সোচ্চার ছিলেন সাংবাদিক মতিন

প্রকাশিত: ০১:০৪, ৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০১:০৪, ৩ মার্চ ২০২৫

নিরপরাধ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর বিরুদ্ধে যেভাবে সোচ্চার ছিলেন সাংবাদিক মতিন

চব্বিশের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে যখন উত্তাল ছিল রাজপথ, তখন সাধারণ জনগণের পাশাপাশি পথে নেমেছিলেন আইনজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সময় আইনজীবী মানজুর আল মতিন আদালতে গিয়েছিলেন নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর গুলির বিচার চাইতে। কিন্তু তিনিও রেহাই পাননি। নিশানা হয়েছিল তার দিকেও।


তিনি বলেছিলেন, "আমার নিজের অভিজ্ঞতা আমি বলতে পারি-আমি ধানমন্ডিতে হাঁটছিলাম, তখন আমার দিকে দু’ রাউন্ড গুলি করা হয়েছে।"

মানজুর আল মতিন বলেন, “আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সবাই দেখেছেন, কিভাবে আমাদের সন্তানদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। বিবিসি, আলজাজিরা সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সেই ভয়াবহ দৃশ্য প্রচারিত হয়েছে।”


আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেনাসদস্যরা অটোমেটিক রাইফেল হাতে শুয়ে আছে, মাত্র ২০ গজ দূরে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ। তাদের দিকে চলে নির্বিচারে গুলি।
তিনি বলেন, "আমরা আমাদের দেশের জনগণ-তাদের দিকে অটোমেটিক রাইফেল থেকে গুলি চালানো হয়েছে। এই দৃশ্য দেখার পর কেউ কি ঘরে বসে থাকতে পারে? আমাদের যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করা উচিত। একজন আইনজীবী হিসেবে সেটাই করতে আজ আমরা আদালতে দাঁড়িয়েছি। আমরা আদালতে বলেছি, নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের ওপর লাইভ রাউন্ড গুলি চালানো চলবে না। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন।"

মানজুর আল মতিন আরও বলেন, "আপনারা দেখেছেন, রিয়া গোপ তার বাবার কোলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একটি শিশু তার চোখ দিয়ে গুলি ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে।" কিন্তু তার অপরাধ কী ছিল? সে শুধু বাসার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল! এটি কি কোনো অপরাধ? এই নির্মমতা কি কেউ মেনে নিতে পারে?


তিনি বলেন, "আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি-যারা আন্দোলন করছে, তাদের ওপর লাইভ রাউন্ড ব্যবহার করা চলবে না। টিয়ার শেল ছুড়ুন, লাঠিচার্জ করুন, প্রয়োজনে রাবার বুলেট ছুড়ুন। যদিও এত কাছ থেকে রাবার বুলেট ছুড়ে বহু মানুষ অন্ধ হয়ে গেছে, সেটিও আপনারা দেখেছেন। কিন্তু লাইভ রাউন্ড ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।"

নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে মানজুর আল মতিন বলেন, "আমি ধানমন্ডিতে হাঁটছিলাম, তখন আমার দিকে দু’ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। তারা কোনো পোশাক পরেনি, আমি জানি না তারা কারা। কিন্তু তারা পিস্তল থেকে গুলি চালিয়েছে, কারণ আমার হাতে ক্যামেরা ছিল।"
তিনি আরও বলেন, "তারা চায়নি কোনো প্রমাণ থাকুক। কিন্তু প্রমাণ ধ্বংস করা যায় না, আজকের দুনিয়ায় সত্যি ঘটনা পৌঁছে যায়।"

আইনজীবী মানজুর আল মতিন জানান, "আজ ছাত্ররা সারা দেশ থেকে স্পষ্টভাবে বলেছেন, ডিবি অফিসে যে ছয়জনকে আটকে রাখা হয়েছে, তারা বন্দি। তাদের দিয়ে অস্ত্রের মুখে ভিডিও বানানো হয়েছে। ছাত্ররা বলেছে, তারা আন্দোলন প্রত্যাহারের কোনো ঘোষণা দেয়নি।"


তিনি প্রশ্ন রাখেন, "গোয়েন্দা প্রধান বলেছেন, নিরাপত্তার প্রয়োজনে তাদের ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছে। তাদের খাবার খাওয়ার ছবি প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু একজন নাগরিককে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বৈধতা কোথায়? আদালতে আমরা এই প্রশ্ন তুলেছি।"

তিনি বলেন, "আপনারা নাইমের ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখেছেন। গণমাধ্যমের অনেকে তা দেখাতে পারেনি, কিন্তু পত্রিকায় এসেছে। তাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, সেটিকে আপ্যায়ন বলা যায় না!"
তিনি আরও বলেন, "আমরা আদালতে বলেছি, এই ছয়জনকে অবশ্যই আদালতের সামনে হাজির করতে হবে। তাদের কাছ থেকে জানতে হবে-তারা কি আটক ছিলেন, নাকি স্বেচ্ছায় ডিবি অফিসে গিয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সবাই চাই।"

সূত্র:https://tinyurl.com/2cuu988k

আফরোজা

×