ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

আলেম ও এতিমদের সম্মানে ইফতারে জামায়াত আমির

বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২ মার্চ ২০২৫

বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

.

দেশ, জাতি ও ইসলামের কল্যাণে দেশের আলেম সমাজকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বিপ্লবোত্তর অনেক কিছু হবে বলে কল্পকাহিনী প্রচার করা হলেও তার ১ ভাগও হয়নি। যতটুকু হয়েছে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা তাও সমর্থন করি না। মূলত, এদেশে কোনো বৈষম্যের স্থান দেওয়া হবে না।
রবিবার রাজধানীর মিরপুর-১৪ এর গ্র্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে ঢাকা-১৫ আসনের  উলামায়ে কেরাম ও এতিমদের সম্মানে এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দ্বীনই আমাদের জীবনোদ্দেশ্য। দেশে দ্বীনের শিক্ষা যত সম্প্রসারিত হবে, ততই সমাজ আলোচিত হয়ে উঠবে। আর দ্বীনের শিক্ষা সংকুচিত হলে নেমে আসবে অন্ধকার। যার প্রমাণই হচ্ছে পতিত আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের অপশাসন-দুঃশাসন। সে সময় দেশ বরেণ্য আলেম-উলামাদের সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ আর পায়ে ছিল ডান্ডবেরী। অথচ চোর, ডাকাত, অপরাধী ও সমাজ বিরোধীরা গোটা দেশ নির্বিঘ্নে দাপিয়ে বেড়িয়েছে।
তিনি তার নিজের গ্রেপ্তারের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গভীর রাতে। কিন্তু আমাকে আয়নাঘরে রাখা না হলেও আমি তা দেখেছি। আমরা এমনভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যেন তারা কোন ভয়ঙ্কর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রথম কয়েক দিন কেরানীগঞ্জ কারাগারে রাখার পর আমিসহ ৩৮ জন বরেণ্য আলেমকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বদলি করা হয়। গাড়িতে আমি ছাড়া প্রত্যেকের হাতে হ্যান্ডকাফ ও পায়ে বেড়ি পরা দেখে আমি কেঁদেছি। কিন্তু মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ দিয়েছেন’। তিনি দেশকে এগিয়ে নিতে দেশের আলেম সমাজকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, পবিত্র  মাহে রমজান মাগফিরাত ও গুনাহ মাফের মাস। মূলত, সিয়াম মানুষের গুনাহ পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। হাদিসে রাসুল (স.)-এ এসেছে, একদিন রাসুল (স.) পরপর তিন আমীন বললেন। সাহাবিগণ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) আপনি তো এমন কখনো করেন না। প্রত্যুত্তরে রাসূল (স.) বললেন, আমার কাছে জিব্রাইল (আ.) এসে বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে তার জীবনে রমজান মাস পেল অথচ নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারল না। আমি বললাম, আমিন!
এরপর তিনি বলছেন, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে বা কোনো একজন বার্ধক্য অবস্থায় পেল অথচ জান্নাত লাভ করতে পারল না ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক। আমি বললাম আমিন। জিব্রাইল (আ.) আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে, আপনার নাম শোনার পর দুরুদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন। তাই আমাদের প্রত্যেককে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য রমজান মাসে যথাযথভাবে সিয়াম ও কিয়াম পালন করতে হবে।
আমির জামায়াত বলেন, এদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও নানা ধর্মের মানুষের বসবাস। তারা সকলেই বাংলাদেশের নাগরিক। মানুষ হিসাবে সকলের কল্যাণে কাজ করা আমাদের কর্তব্য। ছাত্র-জনতার সফল আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নতুন এক বাংলাদেশ পেয়েছি। তারা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলের নিরাপত্তার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান ও নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ইয়াসিন আরাফাত প্রমুখ।

×