ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১

ডেভিল হান্টেও সীতাকুণ্ডে ধরাছোঁয়ার বাইরে আওয়ামী লীগ নেতারা, জনমনে ক্ষোভ

আশরাফ উদ্দিন, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)

প্রকাশিত: ১৯:০৬, ১ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৯:০৭, ১ মার্চ ২০২৫

ডেভিল হান্টেও সীতাকুণ্ডে ধরাছোঁয়ার বাইরে আওয়ামী লীগ নেতারা, জনমনে ক্ষোভ

ছ‌বি: সংগৃহীত

গেল বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত এমপি, কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা, উপজেলার নেতারা কমবেশি ধরাশায়ী হয়েছেন। অনেকেই ভারতে পালানোর পথে ধরা পড়েছেন জনতার হাতে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু চট্টগ্রাম জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা সীতাকুণ্ড। এ উপজেলায় সরকার পতনের ৭ মাসেও গ্রেপ্তারের আওতায় আসেনি এখানকার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ডেভিল হান্ট অপারেশনেও উল্লেখযোগ্য কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো ফেসবুকে সক্রিয় তারা। এতে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা শহরে পালিয়ে সীতাকুণ্ডেও আসছেন মাঝেমাঝে। কিন্তু পুলিশের ব্যর্থতায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। 

জানা গেছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়। এ অপারেশনের পর সীতাকুণ্ডের রাজনৈতিক সচেতন মহল ভেবেছিল এবার অন্তত অধরা আওয়ামী লীগ নেতারা গ্রেপ্তার হবেন। কিন্তু এবারও তাদের হতাশ হতে হলো। কোন একটা নেতাও গ্রেপ্তার হয়নি সীতাকুণ্ডে। সীতাকুণ্ডে সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে সলিমপুর ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। এসব এলাকায় ৯০টি ওয়ার্ডে ১২০ জন মেম্বার-কাউন্সিলর রয়েছে। এছাড়াও ৯ জন চেয়ারম্যান, ১ সাবেক মেয়র, ২ জন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, ১ জন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, ২ জন সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শতাধিক তালিকাভুক্ত নেতা রয়েছে। আছে যুবলীগ, ছাত্রলীগের জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারাও। এদের কেউ ধরা পড়েনি। অথচ তাদেরকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পরও সীতাকুণ্ড থানায় ও চট্টগ্রাম আদালতে অন্তত ১ ডজন মামলা হয়। এসব মামলায় উল্লেখযোগ্য গ্রেপ্তার নেই বললেই চলে। 

যদিও ২ মাস আগে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজীকে গ্রেপ্তার করে প্রশংসা পেয়েছিল সীতাকুণ্ড থানা। কিন্তু এরপর আর কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে সর্বশেষ আওয়ামী ডামি নির্বাচনের এমপি এস এম আল মামুন, সাবেক এমপি দিদারুল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, এস এম আল মামুনের পিএস সাইদুর রহমান মারুফ, মামুনের ভাই আল নোমান, যুবলীগের উত্তর জেলার সভাপতি মোঃ শাহজাহান, উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারি জসীম, যুবলীগ নেতা আরিফ, ছাত্রলীগ সভাপতি শিহাব উদ্দিন, সেক্রেটারি রিয়াদ জিলানীসহ উল্লেখযোগ্য নেতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের মধ্যে বাকের ভূঁইয়া আমেরিকা চলে গেছেন সরকার পতনের আগেই। তবে গুঞ্জন ওঠেছে, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও বড় বড় নেতারা কক্সবাজারে আল মামুনের পাঁচ তারকা হোটেল গ্রীণ ন্যাচার রিসোর্টে অবস্থান করছে। সোনাইছড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনির আহাম্মদ বর্তমানে নগরের চকবাজার থানাধীন ইপিক বিল্ডিংয়ে থাকছেন দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিবার নিয়ে। মাঝেমাঝে তিনি সোনাইছড়িতে তার জীপ গাড়ি নিয়ে আসেন বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। 

এছাড়াও বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রেহান, ভাটিয়ারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন, যুবলীগ নেতা শাহজাহান, জসিম, ছাত্রলীগের সভাপতি শিহাব উদ্দিন চট্টগ্রাম শহরে রয়েছেন। এর মধ্যে জসিম উদ্দিন চট্টেশ্বরী মোড়ে ভাড়া বাসায় থাকছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পুলিশকে এসব তথ্য দিলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো যেন তাদেরকে বাঁচাতে চাইছে পুলিশ। 

উপরে উল্লেখিতদের বিরুদ্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের উপর হামলা ও সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতার বিভিন্ন মামলা হয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তার না থাকায় তারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন। সর্বশেষ সীতাকুণ্ড ২ সাবেক এমপি দিদারুল আলম, এস এম আল মামুনসহ, সাবেক এডিশনাল পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, সাবেক ওসি ইফতেখারের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে চট্টগ্রাম আদালতে। ওই মামলায় ৫৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য জহুরুল আলম জহুর বলেন, "আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম না তখন আমাদেরকে মাটির নিচের গর্ত থেকেও বের করে নিয়ে আসতো পুলিশ। কিন্তু এখন দেখছি তার সম্পূর্ণ বিপরীত। মামলা হচ্ছে, অভিযোগ হচ্ছে। কিন্তু কোন গ্রেপ্তার নেই। এর অর্থ কি পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাঁচাতে ব্যস্ত। আমি মনে করি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করতে না পারা পুলিশেরই ব্যর্থতা।"

এ বিষয়ে জানতে সীতাকুণ্ড থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মুজিবুর রহমানকে কল করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।

আবীর

×