ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১

মুখোমুখি ইলিয়াস হোসেন-সোহেল তাজ

সত্যিই কি বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন সোহেল তাজ?

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০৫:২৪, ১ মার্চ ২০২৫

সত্যিই কি বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন সোহেল তাজ?

ছবি : জনকণ্ঠ

বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত নেককারজনক এবং হৃদয় বিদারক এক ঘটনার নাম বিডিআর বিদ্রোহ বা বিডিআর হত্যাকাণ্ড। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, সংঘটিত সেই নারকীয় ঘটনায় ৫৭ জন অফিসার সহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন নিহতদের স্বজনরা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে চলছে এ ঘটনার বিচার কার্যক্রমও। সম্প্রতি প্রবাসে অবস্থানরত অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার এক ফেসবুক পোস্টে এ নারকীয় ঘটনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ জড়িত বলে সন্দেহ পোষণ করেন। বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সাথে সোহেল তাজ জড়িত থাকার সম্ভাবনা আছে। অতএব সে যেন আপাতত দেশের বাইরে যেতে না পারে।

কয়েকদিন পর ফেসবুকের অন্য একটি পোস্টে এই সাংবাদিক দাবি করেন, “পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় সোহেল তাজ লন্ডনে ছিলেন বলে জানালেও, প্রকৃতপক্ষে তিনি সিলেটে গিয়ে সে এখান থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং গোপনে অবস্থান করেন। সোহেল তাজের পাসপোর্ট পরীক্ষা করা হলে দেখা যাবে, তার ঢাকা থেকে প্রস্থানের তথ্য থাকলেও লন্ডন বা অন্য কোন দেশে পৌঁছানোর তথ্য নেই।”

ইলিয়াস হোসেন পোস্টে লিখেন, “সোহেল তাজের পাসপোর্ট জব্দের অনুরোধ থাকলো। অন্যথায় দায় সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।” এসময় সোহেল তাজের বাবা তাজউদ্দিন আহমেদ কে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘র’ এর পরীক্ষিত বন্ধু বলেও দাবি করেন তিনি।

সর্বশেষ, বুধবার রাতে পিলখানার ঘটনা নিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি অনুসন্ধানী ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেন ইলিয়াস হোসেন। শ্বাস-রুদ্ধকর ৩৩ ঘন্টা ও পরের ১৬ বছর শিরোনামে ওই ডকুমেন্টারিতে বিডিআর এর ঘটনায় সোহেল তাজের জড়িত থাকার বিষয়টি আবারো সামনে আনেন তিনি।

এদিকে বিডিআর এর ঘটনায় নিজে জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে শুরু থেকেই প্রতিবাদমুখর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ। অভিযোগকারী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে প্রমাণ দেয়ার চ্যালেঞ্জ দেন তিনি। প্রমাণ করতে না পারলে নাকে খত দেওয়ার দাবিও জানান আওয়ামী লীগের এই সাবেক প্রতিমন্ত্রী। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন, “আমার চ্যালেঞ্জ প্রমাণ করো, না পারলে নাকে খত দিতে হবে।”

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক ইলিয়াসের প্রচার করা ডকুমেন্টারির একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে আবারো নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন সোহেল তাজ। বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বিদেশী অবস্থানরত একজন তথাকথিত ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিক বারবার আমাকে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়াবার জন্য কোন প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা বানোয়াট মনগড়া কথা বিভিন্নভাবে প্রচার করছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এদিকে সোহেল তাজের এই পোস্টে এসে কমেন্ট করেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলেছি আপনি ঢাকা থেকে ডিপার্চার নিলেও বাইরের কোন দেশের এরাইভাল নেননি। অতএব আপনার পাসপোর্টের সিল দেখান যেখানে লন্ডনের এরাইভাল আছে। তাহলে বুঝবো, আপনি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় বিদেশে অবস্থান করেছেন।

ইলিয়াসের কমেন্টের পর রিপ্লাই দিয়েছেন সোহেল তাজও। সেখানে তিনি লিখেন, “তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য। আশা করি পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছো। আমার পোস্টটা আবার পড়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমি স্পষ্টভাবে বলেছি যে, তদন্ত কমিশনকে আমি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। তাই তুমি তোমার সব প্রমাণাদি তাদের কাছে দিয়ে দাও। তারপর তারা যা করার করবে।”

সোহেল তাজ ও ইলিয়াস হোসেনের এমন তর্কযুদ্ধে দ্বিধায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন আসলে কে সত্যি বলছেন? স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সন্তান সোহেল তাজ, নাকি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় জনপ্রিয়তা অর্জন করা সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। সাধারণ মানুষের দাবি, কাঁদা ছোড়াছুড়ি না করে, স্পর্শকাতর এই বিষয়টির দ্রুত সমাধান হোক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উঠে আসুক প্রকৃত ইতিহাস। 

মো. মহিউদ্দিন

×