ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

ভারত-পাকিস্তান উভয়ের অধীনতাই অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ: মাহফুজ

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান উভয়ের অধীনতাই অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ: মাহফুজ

ছবি: সংগৃহীত।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ভারতীয় সাংবাদিক অর্ক দেবের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পরিচয় নিয়ে কথা বলেছেন।

সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে অর্ক দেব প্রশ্ন করেন, "ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তিক্ত হচ্ছে কেন? প্রতিবেশী হিসেবে সুসম্পর্ক কাম্য নয় কি?"

উত্তরে মাহফুজ আলম বলেন, "এটি এক বা দুই দিনের ঘটনা নয়। আমাদের হাসিনা বিরোধী বিক্ষোভ দমনে ভারতের ভূমিকা রয়েছে, তবে বাংলাদেশ তার নিজস্ব অবস্থানে অটল থাকবে। বাংলাদেশ কখনোই ভারতের অধীনে যাবে না।"

তখন সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করেন, "আপনার কি মনে হয় ভারত বাংলাদেশ দখল করতে চায়? কোনো দায়িত্বশীল নেতৃত্ব তো এ ধরনের মন্তব্য করেননি।"

এ বিষয়ে মাহফুজ স্পষ্ট করে বলেন, "না, আমি মনে করি ভারত তা করবে না এবং ন্যায্য কারণেই করবে না। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে বিদ্রোহপ্রবণ। বারবার এই ভূখণ্ডে গণআন্দোলন হয়েছে—১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৯০-এর অভ্যুত্থান তার প্রমাণ। বাংলাদেশের জনগণ সহজে কোনো কর্তৃত্ব মেনে নেয় না।"

অর্ক দেব এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহফুজ বলেন, "ভারতের আনুগত্য অস্বীকার করলেই কেউ পাকিস্তানপন্থী হয়ে যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছিলেন, কিন্তু স্বাধীনতার পর তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছাড়তে বলেছিলেন। এটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ তার স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখতে চায়। আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই, তবে কোনোভাবেই কারও অধীনতা স্বীকার করব না।"

তিনি আরও বলেন, "ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আধিপত্য কেউই আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারবে না। পাকিস্তানের ধর্মীয় হেজিমনি ও ভারতের রাজনৈতিক আধিপত্য—দুটোকেই আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। বাংলাদেশ তার নিজস্ব কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে।"

সাক্ষাৎকারের শেষে মাহফুজ আলম বলেন, "আমরা দিল্লি কিংবা পিন্ডিকে অনুসরণ করব না। আমাদের লক্ষ্য হবে ঢাকাকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধীন, স্বতন্ত্র এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।"

তিনি আরও বলেন, "ঢাকা হবে সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু। এই ভূখণ্ডে নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রবাহ মিলিত হয়েছে। নাথ, বৈষ্ণব থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্প্রদায় এখানে বিকশিত হয়েছে। তাই আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য বজায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে।"

মাহফুজ আলমের বক্তব্য বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নানা দিক উন্মোচন করেছে। তার মতে, বাংলাদেশ কারও ছায়ায় নয়, বরং ঢাকাকে কেন্দ্র করেই তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

সায়মা ইসলাম

×