ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা

শিক্ষা ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা ও শিক্ষকদের আন্দোলন: প্রয়োজন সুসংগঠিত পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৯:৫৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শিক্ষা ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা ও শিক্ষকদের আন্দোলন: প্রয়োজন সুসংগঠিত পরিকল্পনা

ছবি : সংগৃহীত

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ক্রমশ অবনতি ও শিক্ষকদের দুরবস্থার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। তিনি বলেছেন, দেশের শিক্ষার মৌলিক ভিত্তি ধ্বংসের মুখে, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি বলেন, “একটি দেশের মূল ভিত্তি গড়ে ওঠে শিক্ষার ওপর। কিন্তু আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার যে ভয়াবহ অবস্থা, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। শিক্ষকদের দিনের পর দিন রাস্তায় নামতে হচ্ছে, ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে—এটি দেশের জন্য লজ্জার বিষয়।”

‘ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসার নতুন ধারা’

উমামা ফাতেমা আরও বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন করে ‘ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা’ চালু হয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এই নতুন ধারা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা ছোটবেলায় কখনো শুনিনি যে ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসাও হতে পারে। এখন দেখা যাচ্ছে উচ্চবিত্ত শ্রেণির অনেকে সন্তানদের সেখানে পড়াচ্ছেন এবং পরে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এটি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার চেয়ে একদম ভিন্ন একটি ধারা।”

‘শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য ও সংকট’

শিক্ষকদের বেতন প্রসঙ্গে উমামা ফাতেমা বলেন, “আমাদের দেশে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক যে বেতন পান, তা অনেক ক্ষেত্রেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দারোয়ানের বেতনের সমান। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। বেতন বৈষম্যের কারণে শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, যা শিক্ষার মানের ওপরও প্রভাব ফেলছে।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না।"

‘কারিকুলাম পরিবর্তনের ফলে বিভ্রান্ত অভিভাবকরা’

নতুন কারিকুলামের কারণে অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস ও হতাশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, “আমার এক কাজিনের সন্তান নতুন কারিকুলামের পর স্কুল পরিবর্তন করেছে। দেখা গেছে, অনেক অভিভাবক সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বাংলা মাধ্যম থেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ ইংলিশ মিডিয়ামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “একটি সুসংগঠিত শিক্ষাব্যবস্থা না থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ আমাদের কোনো অভিন্ন শিক্ষানীতি নেই।”

‘একটি অভিন্ন শিক্ষা কাঠামোর প্রয়োজন’

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উমামা ফাতেমা বলেন, “একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সে বলেছে, অন্তত ক্লাস তিন-চার পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা থাকা উচিত। তারপর অভিভাবকের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষার পথ বেছে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শৈশবের শিক্ষার ভিত্তি এক হওয়া উচিত।”

‘সরকারের পরিকল্পনার অভাব ও সমাধানের দাবি’

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষাখাতে কোনো কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, “শিক্ষকরা বহু বছর ধরে আন্দোলন করছেন, কিন্তু তাদের জন্য কোনো কার্যকর সমাধান বের করা হয়নি। সরকারের উচিত ছিল অন্তত একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া, যাতে শিক্ষার এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।”

তিনি আরও বলেন, “দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে শিক্ষার মৌলিক কাঠামো সংস্কার করা জরুরি। অভিন্ন নীতির মাধ্যমে একটি মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে শিক্ষার এই বৈষম্য জাতির জন্য আরও গভীর সংকট তৈরি করবে।”

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সরকারকে এখনই কার্যকর শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। অন্যথায়, বৈষম্য আরও বাড়বে এবং শিক্ষার গুণগত মান ক্রমশ নিম্নমুখী হবে।

সূত্র : https://www.youtube.com/watch?v=Hyx1wZQtBMY

মো. মহিউদ্দিন

×